- মে ১৯, ২০২৪
- লিড নিউস
- 99
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ জামালগঞ্জে ভোটের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ স্থানীয় সংসদ সদস্য দুই প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়ায় পুরো জেলার রাজনীতি সচেতনদের দৃষ্টি ওই উপজেলার দিকে। আগামী ২১ মে ভোট এই উপজেলায়।
জামালগঞ্জ উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ১ লক্ষ ২৯ হাজার ৫৮৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৬৬ হাজার ২৭২ জন এবং নারী ৬৩ হাজার ৩১০ জন। হিজরা ভোটার রয়েছে ১ জন।
বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. ইকবাল আল আজাদ (ঘোড়া), জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি রেজাউল করিম শামীম (মোটরসাইকেল) ও উপজেলা বিএনপির বহিস্কৃত সভাপতি মো. নুরুল হক আফিন্দি (আনারস) লড়ছেন চেয়ারম্যান পদে। শেষ মূহূর্তের প্রচারণায় এখানে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর পক্ষে জেলা নেতারা অবস্থান নেওয়ায় ভোট উৎসব জমে ওঠেছে। সকলের নজরও ওই উপজেলার দিকে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট জামালগঞ্জের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের মনোনয়নের কয়েকদিন আগেই গেল ১৩ এপ্রিল উপজেলার সাচনা বাজার জগন্নাথ জিউর মন্দিরের উন্নয়ন কাজ পরিদর্শনের সময় সংগঠনের জেলা শাখার সহ সভাপতি রেজাউল করিম শামীমের পক্ষে সকলের সমর্থন চান। ওই সমাবেশে তিনি বলেন, শামীম দীর্ঘদিন হয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন, আপনারা তাঁকে সমর্থন দিলে তিনি আপনাদের হয়ে আমাদের কাছে উন্নয়ন কাজের জন্য যেতে পারবেন। এসময় তিনি সকলের কাছে শামীমের জন্য ভোট চান।
একদিন পর ১৫ এপ্রিল সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. রনজিত সরকার একই মন্দিরে জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদকে নিয়ে উন্নয়ন সভা করেন।
সভায় সরাসরি ইকবাল আল আজাদের পক্ষে প্রচারণা না করলেও কৌশলে তিনি তাঁর (ইকবাল আল আজাদ) পক্ষেই সমর্থন চান উপস্থিত সকলের। উপস্থিত অন্য বক্তারা এমপি’র আগামী দিনগুলোর কাজের সুবিধার জন্য ইকবাল আল আজাদের নামোল্লেখ করেই সকলের সমর্থন চান।
এরপর ২৪ এপিল উপজেলার গজারিয়া বাজারে কৃষক কৃষাণীর সমাবেশে অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখ্ত পলিন ও স্থানীয় সংসদ সদস্য রনজিত সরকার। ওই সমাবেশেও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ তাদের সঙ্গে ছিলেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময় রেজাউল করিম শামীমকে ইঙ্গিত করে এই দুই নেতাই বলেন, ‘যারা দলে থেকে জাতীয় নির্বাচনে নৌকার বিরোধীতা করে, ভোট এলে সাম্প্রদায়িক বিষবাস্ফ ছড়ায়, উপজেলা নির্বাচনে তাদের ভোট দেবেন না।’
দলের গুরুত্বপূর্ণ তিন নেতা দুই প্রার্থীর পক্ষে এভাবে অবস্থান নেওয়ায় ভোটে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়েছে এই উপজেলায়।
শুক্রবার উপজেলার ফেনারবাক ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর মন্দির উদ্বোধন করতে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য রনজিত সরকার। সেখানে তার সঙ্গে দুইজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এমপি রনজিত সরকার নির্বাচন নিয়ে কোন বক্তব্য দেন নি। তবে তার সঙ্গে যারা ছিলেন তারা কৌশলে ইকবাল আল আজাদের পক্ষে ভোট চেয়েছেন বলে দাবি করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী রেজাউল করিম শামীম।
রেজাউল করিম শামীম বললেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আমার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ইকবালের পক্ষে কৌশলে ভোট চাইছেন। ইকবাল আল আজাদ অবশ্য এই অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে বলেছেন, সংসদ সদস্য কারো পক্ষে ভোট চান নি। শুক্রবার একটি মন্দির উদ্বোধনে তিনি (ইকবাল) যেতে চেয়েছিলেন নির্বাচনে প্রার্থী থাকায় এমপি তাকে না যাবার জন্য বলেছেন।
এদিকে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে শামীমের পক্ষে প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশে ভোট চাওয়ার যুক্তি তুলে ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট বললেন, শামীম আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন দীর্ঘদিন ধরে। গেল জাতীয় নির্বাচন ছাড়া এর আগে কখনোই নৌকার বিরোধীতা করেন নি তিনি। দলে তাঁর ত্যাগ আছে। তিনি বয়োজ্যেষ্ঠ। এবারই তাঁর শেষ নির্বাচন। এজন্য আমি তাঁর সমাবেশে এসেছি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখ্ত পলিন বললেন, সভাপতি যেহেতু তাঁর পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে সমাবেশে গেছেন, তিনিও দলের নিবেদিত কর্মী তার পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে আজ (রবিবার) সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। তিনি বললেন, আমি আওয়ামী পরিবারের এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের পক্ষে ভোট চাইবো। দলে থেকে জাতীয় নির্বাচনে নৌকার বিরোধীতাকারী কারো পক্ষে ভোট চাইতে পারবো না আমি। সূত্র: দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর