- মে ৩০, ২০২৪
- শীর্ষ খবর
- 59
নিউজ ডেস্ক: সিলেটের পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এসব উপজেলায় ২১৫টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রের কয়েকটিতে প্রায় আড়াই সহস্রাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যান্য উপজেলা এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
ঘুর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সিলেট এবং এর উজানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তুমুল বৃষ্টিপাত হওয়ায় বুধবার থেকে সিলেটের সিমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট জৈন্তাপুর কানাইঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করে। মোটামুটি আকস্মিক বন্যায় দুর্ভোগে পড়েন এ তিন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।
আর আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ডুবতে শুরু করে জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চল। কোম্পানিগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলেও বন্যার পানি উঠতে শুরু করে।
এই উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কানাইঘাট উপজেলার। এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে বন্যার পানি উঠতে শুরু করে। অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ডুবতে শুরু করে রাস্তাঘাট ঘরবাড়ি। ডুবতে শুরু করে কিছুকিছু ঘরবাড়িও। বৃহস্পতিবার অবস্থার আরও অবনতি হলে প্রশাসন বন্যার্তদের জন্য ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করে। বুধবার এসব আশ্রয়কেন্দ্রে কেউ না উঠলেও আজ বৃহস্পতিবার অন্তত দেড় হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরীন।
জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যার্তদের জন্য মোট ৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ৭০০ বন্যার্ত আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মেসালিক রুমাইয়া। তবে এ উপজেলায় বন্যার পানি আস্তে আস্তে নামতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন আমাদের জৈন্তাপুর জাহিদুল ইসলাম।
গোয়াইনঘাট উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বিভিন্ন গ্রামের ঘরবাড়িতে পানি উঠার কারণে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় মোট ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত ১৩৭টি পরিবারের প্রায় ৩০০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার জকিগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে পানি উঠতে শুরু করে। রাস্তাঘাট ডুবতে শুরু করে বিভিন্ন রাস্তাঘাট। নিম্নাঞ্চলের কিছুকিছু বাড়িতেও পানি উঠে। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় মোট ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়। তবে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েকটি পরিবারের প্রায় ২০/২৫ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফসানা তাসনিম।
কোম্পানিগঞ্জেও পানি বাড়ছে। ডুবতে শুরু করেছে রাস্তাঘাট এবং হাটবাজার ও স্কুল। কিছু কিছু বাড়িতে পানিও উঠেছে। এ উপজেলায় মোট ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হলেও এসব কেন্দ্রে এখনো কেউ উঠেন নি বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ। তিনি আরও জানান, আশ্রয়কেন্দ্রে না উঠলেও কিছু কিছু বন্যার্ত অপেক্ষাকৃত সুরক্ষিত এলাকায় থাকা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে উঠেছেন।
বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে যারা উঠেছেন তারা সাথে গবাদি পশু বিশেষ করে গরু এবং ছাগলও নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এদিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন জানিয়েছেন, উপজেলার বুধবারীবাজার ও বাঘা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করলেও অন্যান্য ইউনিয়ন এখনো সুরক্ষিত। তবে কতক্ষন সুরক্ষিত থাকবে তা বলা যাচ্ছেনা। আর তাই সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় মোট ৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে বুধবারীবাজার ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে ৩/৪টি পরিবারের কয়েকজন বন্যার্ত আশ্রয় নিয়েছেন।
সিলেটের জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যা উপদ্রুত ৫টি উপজেলার প্রতিটিতে ২০০ বস্তা করে ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ১৫ মেট্রিক টন করে ৭৫ মেট্রিক টন চাল ও ৫০ হাজার টাকা কওে মোট আড়াই লাখ টাকার অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে সুরমা নদী কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় ছড়া ও খাল দিয়ে সিলেট নগরীতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তবে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সিলেট সিটি কর্পোরেশন সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে রেখেছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কর্মকর্তা কর্মচারিদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হবে এবং বন্যার্তদের জন্য শুকনো খাবারসহ পানি এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ক্রয় করা হয়েছে।