• জুন ২০, ২০২৪
  • জাতীয়
  • 54
ভোলায় ৫ দিনে ১২ রাসেলস ভাইপার উদ্ধার

নিউজ ডেস্ক: ভোলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গত পাঁচদিনে ১২টি রাসেলস ভাইপার সাপ (চন্দ্রবোড়া) উদ্ধার করা হয়েছে। এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে এর মধ্যে ১১টি সাপ মেরে ফেলেছেন। একটি সাপ বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সকালে সদর উপজেলার শিবপুর চায়না ইপিজেড বালুর মাঠে একটি, তজুমউদ্দিন উপজেলার সোনাপুরের ২নম্বর ওয়ার্ড কাছারি বাড়ির সামনে একটি এবং বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের জসিম হাওলাদারের বাড়িতে একটি রাসেলস ভাইপার পাওয়া যায়। এ ছাড়া বুধবার (১৯ জুন) বিকেলে তজুমউদ্দিন উপজেলার চৌমুহনী এলাকায় খেলার মাঠেও এ সাপ দেখা যায়।

এর আগে মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকালে সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশায় পাকার মাথা এলাকায় বাড়ির পাশে জালের সঙ্গে পেঁচানো অবস্থায় একটি রাসেলস ভাইপার পাওয়া যায়। এ ছাড়া মঙ্গলবার রাতে দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের জালু মাঝির বসতঘর থেকে আরও একটি রাসেলস ভাইপার উদ্ধার করা হয়।

এর আগে গত রবিবার (১৬ জুন) লালমোহন উপজেলার লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ এলাকায় একটি বাড়ির শৌচাগারে এ সাপ দেখা যায়। এ ছাড়া বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা ও সাগর উপকূল উপজেলা চরফ্যাশনের বিভিন্ন ইউনিয়নে আরও পাঁচটি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখা যায়। পরে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে সাপগুলোকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন।

এর মধ্যে তজুমউদ্দিন উপজেলায় পাওয়া একটি সাপ বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে জেলাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয় জানায়, বেশ কয়েকদিন ধরে জেলার সব জায়গায় সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। তবে এর আগে চরফ্যাশনের কুকরি-মুকড়ি, ঢালচর কিংবা মনপুরা উপজেলায় দেখা গেলেও এবার সদর উপজেলাসহ প্রায় সব জায়গায় এ সাপের বিচরণ বাড়ছে। এতে চরাঞ্চল নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষসহ জেলা জুড়ে সবাই আতঙ্কে রয়েছেন।

শিবপুর চায়না ইপিজেড এলাকার জেলে জয়নাল মাঝি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে নদীতে মাছ শিকার করে ঘাটের দিকে যাওয়ার সময় বালুর মধ্যে এই সাপটি দেখতে পাই। পরে আরও লোকজন এসে সাপটিকে রাসেলস ভাইপার বলে নাম দেয়। এর আগে এ সাপ আর কখনো দেখিনি। সাপটি দেখতেও অনেক ভয়ানক। অন্য সাপ থেকে দেখতে আলাদা। সাপটি দেখে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেড়ে ফেলেন।’

দৌলতখান উপজেলার জালু মাঝি জানায়, তার বসতঘরে খাটের নিচে তিনটি বিড়াল মৃত অবস্থায় দেখতে পান। পরে ঘরের লোকজন খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে রাসেলস ভাইপারকে ঘর থেকে বের হতে দেখেন। তখন সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। এর পর সাপটিকে খুঁজে মেরে ফেলেন উপস্থিত লোকজন।

লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ এলাকার মো. হারুন শিকদার বলেন, রবিবার বিকেলে বাড়ির শৌচাগারের দরজা খুলে টিনের ফাঁকে একটি মোটা সাপ দেখতে পাই। পরে লাঠি দিয়ে তাড়িয়ে সাপটিকে বাহিরে নিয়ে যাওয়া হয়। বাড়ি অন্য সদস্যরা দেখে আতঙ্কিত হয়ে সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন।

তজুমউদ্দিন উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিশু বলেন, ‘এর আগে আমার ইউনিয়নে এই বিষধর সাপ দেখার খবর পাইনি। পর পর দুই দিন এ সাপের সন্ধান পাওয়ায় ইউনিয়নবাসী আতঙ্কিত হয়ে পরেন। আমি ও বনবিভাগের লোকজন যাওয়ার আগেই সাপটি স্থানীয়রা মেলে ফেলেন। পরে সেখানে গিয়ে গুগল সার্চ করে ছবি মিলিয়ে নিশ্চিত হই এটি রাসেলস ভাইপার সাপ। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করছি।’

এ বিষয়ে ভোলার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, ‘এ সাপ লোকালয়ে সাধারণত খুব কমই দেখা যায়। বাচ্চা দেওয়ার কারণে হয়তো সাপটি লোকালয়ে চলে এসেছে। তবে সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’

কেউ এসব সাপ দেখলে মেরে না ফেলে স্থানীয় বন বিভাগের কর্মকর্তাদের জানানোর অনুরোধ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘সাপ সাধারণত ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। তবে চন্দ্রবোড়া সাপ ডিম পাড়ার পরিবর্তে সরাসরি বাচ্চা দেয়। এরা বছরের যে কোনো সময় প্রজনন করে। একটি স্ত্রী সাপ গর্ভধারণ শেষে ২০ থেকে ৪০টি বাচ্চা দেয়। তবে কোনো কোনো চন্দ্রবোড়া সাপের ৮০টি পর্যন্ত বাচ্চা দেওয়ার রেকর্ড আছে।’

ভোলার সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম শফিকুজ্জামান বলেন, ‘চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া বা রাসেলস ভাইপার সবচেয়ে বিষাক্ত। এর অসহিষ্ণু ব্যবহার ও লম্বা বহির্গামী বিষদাঁতের জন্য অনেক বেশি লোক দংশিত হন। বিষক্রিয়ায় রক্ত জমাট বেঁধে যায়। ফলে অত্যধিক রক্তক্ষরণে দীর্ঘ যন্ত্রণার পর মৃত্যু হয়।’