• জুলাই ২৪, ২০২৪
  • লিড নিউস
  • 53
ইন্টারনেট বন্ধ : স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই সিলেটের ২ লাখ পরিবারের

নিউজ ডেস্কঃ সিলেট নগরীর আখালিয়া বড়বাড়ি এলাকার সোনিয়া আক্তারের স্বামী জাকির হোসেন কুয়েতপ্রবাসী। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় গত ছয় দিন স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি সোনিয়া। তিনি বলেন, ‘এত বছর ধরে আমার স্বামীর সঙ্গে ইমো কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু এখন ইন্টারনেট সংযোগ নাই। আমার স্বামী গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকবার মোবাইল নম্বরে আইএসডি কল দিয়েছেন। কল রিসিভ করলেও কিচ্ছু শোনা যায় না। আমাদের সাত বছরের মেয়ে তার বাবার সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলত। এখন কথা বলতে না পেরে অনেক কান্নাকাটি করে।’

সোনিয়া একা নন, তার মতো সিলেটের লাখো মানুষ তাদের প্রবাসী স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।

সিলেট নগরীর ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকার ব্যবসায়ী কামাল আহমদের এক ভাই কাতার এবং আরেক ভাই ফ্রান্সে থাকেন। কয়েক দিন ধরে দুই ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি। কামাল বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে আমরা যত দুশ্চিন্তায় আছি তার চেয়েও বেশি দুশ্চিন্তায় আছে আমার প্রবাসী দুই ভাই। আমরা যে ভালো আছি, এই খবরও তাদের দিতে পারছি না।’

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগের ৪ জেলার ২ লাখের বেশি মানুষ ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন। এই মানুষগুলো এখন তাদের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

সিলেট নগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা জহুরা চৌধুরী। তার স্বামী রহিম উদ্দিন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। জহুরা চৌধুরী বলেন, ‘ইন্টারনেট না থাকার কারণে আমার স্বামীর সঙ্গে ছয় দিন ধরে কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না। মোবাইল ফোনে সরাসরি কল দিলে কল রিসিভ হয় টাকা কাটে কিন্তু অপরপ্রান্ত থেকে কোনো শব্দ আসে না। এদিকে আমি একজন শিক্ষার্থী। যেহেতু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তাই আমার স্বামী অবশ্যই আমাকে নিয়ে আরও বেশি দুশ্চিন্তায় আছেন।’

শেখঘাট কলাপাড়া এলাকার বিলকিস আক্তারের ছেলে ফরহাদ আহমেদ লন্ডনে থাকেন। বিলকিস বলেন, ‘আমার ছেলে প্রতিদিন দুইবার ভিডিও কল দিত। কয়েক দিন ধরে আমার ছেলের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। তাই খুব দুশ্চিন্তায় আছি। ছেলেটা কেমন আছে বা আমরা কেমন আছি কিছুই জানাতে পারছি না। তাই অনেক দুশ্চিন্তায় আছি।’

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক ও অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘প্রবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে সিলেট বিভাগের ওপর। স্বজনদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা তো আছেই, রেমিট্যান্স না আসায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সহিংস রূপ নিলে ১৮ জুলাই রাতে সারা দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গতকাল রাতে অত্যন্ত সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট চালু হয়।