- জুলাই ২৯, ২০২৪
- শীর্ষ খবর
- 50
নিউজ ডেস্ক:সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের জালালাবাদ থানা এলাকায় আলোচিত চোরাচালানির ১৪ ট্রাক চিনি বিক্রি করতে আবার নিলাম ডাক হবে। বাজারদরের চেয়ে বেশি দর দিয়ে নিলাম ডাক নেওয়া ব্যবসায়ী গিয়াস মিয়া চিনি গ্রহণ না করায় তার জামানত বাতিল করে আবার নিলাম ডাক আহ্বান করা হয়েছে।
সোমবার (২৯ জুলাই) জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘বুধবার (৩১ জুলাই) মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সরকারিভাবে নিলাম ডাক আহ্বান করা হয়েছে। আগের দরদাতা চিনি গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করে জামানতের ১০ লাখ টাকা ফেরত চেয়ে একটি আবেদন করেছিলেন। বিধি অনুযায়ী তার জামানত বাতিল করে পুনরায় নিলাম ডাক আহ্বান করা হয়েছে।’
খবরের কাগজের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) জালালাবাদ থানার উমাইরগাঁওয়ে গত ৬ জুন ১৪ ট্রাক চোরাই চিনি ধরা পড়ে। এ ঘটনায় পর দিন পুলিশের এসআই মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে জালালাবাদ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন। সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে সীমান্তপথে অবৈধভাবে আনা চিনি চোরাচালানের মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে বড় চালান। পুলিশ হেফাজতে থাকা ১৪ ট্রাক চিনি ১ কোটি ৪২ লাখ টাকায় বিক্রির সরকারি নিলাম ডাক সম্পন্ন হয় গত ৩ জুলাই। সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর হাকিম (তৃতীয়) আদালতে প্রকাশ্য নিলামে চিনি বিক্রি করা হয়েছিল।
সরকারি নিলাম কমিটির সভাপতি ও সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর হাকিম আব্দুল মুমিনসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যের উপস্থিতিতে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের অষ্টম তলায় প্রকাশ্যে নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। জব্দ করা ১ লাখ ৫ হাজার ৭০০ কেজি চিনির মধ্যে মামলার আলামত হিসেবে ৫ কেজি চিনি আদালতে সংরক্ষণ করে বাকি ১ লাখ ৫ হাজার ৬৯৫ কেজি চিনি নিলামে দেওয়া হয়। নিলামের বিট লিস্টে সর্বমোট ৭০ জন নাম তালিকাভুক্ত করেছিলেন। সবার উপস্থিতিতে প্রকাশ্য ওই নিলামে ব্যবসায়ী মো. গিয়াস মিয়া প্রতি কেজি চিনির দাম ১২৫ টাকা ডাক দেন। এই ডাক সর্বোচ্চ হওয়ায় গিয়াসই ক্রেতা মনোনীত হন।
মোট টাকার সাড়ে ৭ পার্সেন্ট ভ্যাট প্রদান করে চিনির মোট দাম হয় ১ কোটি ৩২ লাখ ১১ হাজার ৮৭৫ টাকা। ভ্যাটসহ দাম পড়েছিল ১ কোটি ৪২ লাখ ২ হাজার ৭৬৬ টাকা। নিলামের ক্রেতা চিনির মূল্য ব্যাংকে জমা দিয়ে কাগজপত্র নিয়ে নিলাম ডাকের তিন কার্য দিবসের মধ্যে মালামাল হস্তান্তর করার বাধ্যবাধকতা ছিল।
বাজারে প্রতি কেজি চিনির খুচরা দর ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। পাইকারি দর ১০৪ টাকা। নিলাম ডাকে বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে কিনে ব্যবসায়ী গিয়াস মিয়া আরেক আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন। প্রতি কেজি ১২৫ টাকা দর হাঁকিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে চিনি কিনেছিলেন তিনি। এই দরের সঙ্গে ভ্যাট ও ট্যাক্স যুক্ত হয়ে প্রতি কেজির দাম পড়েছিল ১৪২ টাকা। বাজারদরের চেয়ে প্রতি কেজিতে ২২ থেকে ২৭ টাকা বেশি। এত দাম দিয়ে চিনি কেনার পেছনে কী কারণ? এ নিয়ে তখনই প্রশ্ন উঠেছিল।
সংশ্লিষ্টরা বলেছিলেন, নিলাম ডাকের কাগজপত্র দিয়ে আরও চোরাচালানের ধান্দা ছিল। খবরের কাগজ ব্যবসায়ী গিয়াস মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেছিলেন, “বেশি দাম ‘জোশের ঠেলায়’ হেঁকে চিনি কিনে ফেলেছেন। এ নিয়ে গত ৫ জুলাই খবরের কাগজে ‘১৪ ট্রাক চিনির নিলাম/ বেশি দরদাতা গিয়াসের ‘জোশের ঠেলার’ কী কারণ?” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
গিয়াস মিয়া সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার লতিফপুরের বাসিন্দা। সিলেট নগরীর কালীঘাট বাণিজ্যিক এলাকায় ‘রুহেল ট্রেডার্স’ নামে তার একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে তার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গিয়াস মিয়াকে দিয়ে আড়ালে থাকা একটি চক্র নিলাম ডাক দিয়েছিল। বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে চিনি কেনার কারণ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় আড়ালে থাকা চক্রটি সটকে পড়ে। এ জন্য গিয়াস মিয়া নিলামের চিনি কিনতে অপারগতা প্রকাশ করে আবেদন করেন। আবেদনপত্রে তিনি নিজেকে একজন ‘গরিব ব্যবসায়ী’ বলে উল্লেখ করে জামানতের টাকা ফেরত চেয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে নিলাম ডাকসংশ্লিষ্ট জালালাবাদ থানা সূত্র জানায়, সরকারি নিলাম বিধি অনুযায়ী গিয়াস মিয়ার জামানত বাতিল করে পুনরায় নিলাম ডাক আহ্বান করা হয়েছে। তার জামানত হিসেবে দাখিল করা ১০ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা থাকবে।
সূত্র: খবরের কাগজ