- নভেম্বর ৫, ২০২৪
- রাজনীতি
- 13
নিউজ ডেস্কঃ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে হাসিনাসহ অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও তাদের দোসর-প্রেতাত্মারা এখনো সর্বত্র বসে আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, পতিত স্বৈরাচারের দোসররা সময়-সুযোগ বুঝে ফের জাতির ঘাড়ে চেপে বসতে পারে।
মনে রাখতে হবে, নিজেদের বিশৃঙ্খলা বা অনৈক্যের সুযোগে ফের স্বৈরাচার যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠে না পারে।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে যশোর শহরের মুন্শি মেহেরুল্লাহ ময়দানে (টাউন হল মাঠ) বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা বিএনপি আয়োজিত স্মরণসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তারেক এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ছাত্র-জনতার মহাবিপ্লবের মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকারকে উৎখাত করেছি। হাসিনাসহ অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু তাদের দোসর-প্রেতাত্মারা এখনো সর্বত্র বসে আছে। তারা প্রশাসনকে অস্থিতিশীল করে নিজেদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। মনে রাখতে হবে এসব পতিত স্বৈরাচারের দোসররা সময় সুযোগ বুঝে ফের জাতির ঘাড়ে চেপে বসতে পারে।
তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার ফ্যাসিস্টদের পরিণতি কী হতে পারে তা দেশের মানুষ ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে উপলব্ধি করেছে। তাই আগামীর বাংলাদেশ হতে হবে শোষণ, নির্যাতন ও বৈষম্যমুক্ত। মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও গণবিপ্লবের সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
যারা জাতীয়তাবাদের আদর্শ বুকে লালন করেন, তাদের বজ্রকঠিন ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, সব রকম ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে দেশকে সত্যিকারের গণতন্ত্রের পথে নিতে হবে। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কেবল সংবিধানে কয়েকটি শব্দ যোজন-বিয়োজন করলেই সংস্কার হবে না। সংস্কার করতে হলে প্রথমেই মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সেই লক্ষ্যে বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জাতির সামনে তুলে ধরেছে। সেই দাবি বাস্তবায়নে বিএনপি কাজ করে যাচ্ছে। আপনাদের সেই দাবি পূরণে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, নিজেদের বিশৃঙ্খলা বা অনৈক্যের সুযোগে ফের স্বৈরাচার যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠে না পারে।
‘তরিকুল ইসলাম কখনো প্রাচুর্য ও সম্পদের পেছনে ছোটেননি’
প্রয়াত তরিকুল ইসলাম আমৃত্যু মা, মাটি ও মানুষের মুক্তির সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, তিনি কখনো প্রাচুর্য ও সম্পদের পেছনে ছোটেননি। আজকের নতুন প্রজন্মকে তরিকুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবন ও তার শিষ্ঠাচার থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। ব্যক্তিগত লাভালাভ বা অর্থ-উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে যিনি বা যারা রাজনীতি করেন ও করেছেন; তাদের পরিণতি দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে।
বেলা ৩টায় স্মরণসভা শুরু হলেও তার অনেক আগে থেকেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা দলে দলে স্মরণসভার স্থান মুন্শি মেহেরুল্লাহ ময়দানে জড়ো হতে থাকেন। টাউন হল মাঠ ছাড়িয়ে জনসমাগম ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের রাস্তায়।
লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, আজকের এই স্মরণসভায় হাজারো মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে প্রয়াত তরিকুল ইসলাম কতটা জনপ্রিয় ছিলেন। তরিকুল ইসলাম সারাজীবনই আদর্শের সঙ্গে কোনো আপস করেননি। স্বৈরাচার এরশাদ আমলে এবং ফ্যাসিস্ট ও পতিত স্বৈরাচার হাসিনার আমলে, ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে তরিকুল ইসলাম বারবার কারাবরণ, হামলা ও মামলার শিকার হয়েছেন। কিন্তু তিনি কখনো তার আদর্শ থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি। মরহুম তরিকুল ইসলামের সঙ্গে আমার কাজ করার বেশি অভিজ্ঞতা নেই। তারপরও যতটুকু সময় পেয়েছি ততটুকু সময়ে আমি তার কাছ থেকে মানুষের জন্য রাজনীতি করা শিখেছি।
তারেক রহমান বলেন, তিনি বহুবার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু তারপরও তিনি শেকড়ের কথা ভোলেননি। তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে তার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। আমিও মরহুম তরিকুল ইসলামের এই গুণ থেকে শিক্ষা নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করছি। কারণ, মানুষের ভালোবাসা অর্জনের জন্য এই যোগাযোগের কোনো বিকল্প নেই।
বক্তব্যের আগে প্রয়াত তরিকুল ইসলামের রুহের মাগফেরাত কামনা করে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে অংশ নেন তারেক রহমান। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা দেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু।
তরিকুল ইসলামের বর্ণাঢ্য জীবনের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে বক্তৃতা করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যশোর বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, ডা. হারুন অর রশীদ, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, অধ্যাপক আয়ুব হোসেন, তন্ময় সাহা, এজেড এম সালেক, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন, মোশারফ হোসেন, মাওলানা বেলায়েত হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর প্রমুখ।
স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী অধ্যাপক নার্গিস বেগম, দুই সন্তান শান্তুনু ইসলাম সুমিত ও অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান খান, গোলাম রেজা দুলু, সাবেক পৌর মেয়র মারুফুল ইসলাম মারুফ, একেএম শরফুদ্দৌলাহ ছটলু, মাহাতাব নাসির পলাশ, মাওলানা আব্দুল মান্নান, মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, অ্যাডভোকেট জাফর সাদিক, মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোরে নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক , যুবদলের জেলা সভাপতি এম তমাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক রানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলা সভাপতি প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমির ফয়সাল প্রমুখ। এ ছাড়া স্মরণসভায় খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।