- জুন ২৯, ২০২৫
- লিড নিউস
- 2

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের বহুল আলোচিত শত কোটি টাকার যাদুকাটা বালুমহাল ইজারা নিয়ে বিএনপির দুইপক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করতে ডিবি পুলিশকেও হাতিয়ার করা হয়েছে। ঢাকায় তুলে নিয়ে ইজারাদারের কাছ থেকে ৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ডিবির একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে।
শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে সুনামগঞ্জের একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে এসব চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন যাদুকাটা-১ বালুমহালের ইজারাদার মো. নাছির মিয়া। তিনি জানান, এ ঘটনায় তিনি আইজিপির কাছে লিখিত অভিযোগ ও উচ্চ আদালতে মামলা করতে রোববার ঢাকায় যাচ্ছেন।
নাছির মিয়া লিখিত বক্তব্যে বলেন, যাদুকাটা বালুমহাল বৈধভাবে ইজারা নেওয়ার পরই শুরু হয় ঝামেলা। আওয়ামী লীগের সাবেক ইজারাদার রতন মিয়া হাইকোর্টে মামলা করেন, ফলে ইজারার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ আসে। অন্যদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুর রহমানও বালুমহালে অংশীদারিত্বের দাবি তোলেন। বিষয়টি মীমাংসায় আনতে নাছিররা তাকে ৩০ শতাংশ শেয়ার দিতে রাজি হন। কিন্তু তারপরও মামলা ঠেকাতে পারেননি তারা।
নাছির মিয়ার অভিযোগ, গেল ২৫ জুন হাইকোর্টে মামলার শুনানিতে অংশ নিতে গেলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সেগুনবাগিচা কার্যালয়ের সামনে থেকে ডিবি পুলিশের কয়েকজন সদস্য তাকে তুলে নেয়। পরে মিন্টু রোডের কার্যালয়ে নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে মাহবুবুর রহমান নিজেই সেখানে উপস্থিত হয়ে দশ লাখ টাকা দাবি করেন। ডিবি সদস্যরা শেষ পর্যন্ত তার কাছে থাকা পাঁচ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়ে জোরপূর্বক একটি মুচলেকায় স্বাক্ষর রেখে তাকে ছেড়ে দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে নাছির মিয়া দাবি করেন, ‘আমাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। আমি জীবনের নিরাপত্তা চাই এবং এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ-১ আসনের সম্ভাব্য বিএনপি প্রার্থী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ সাজানো নাটক। যাদুকাটার বালুমহাল ইজারার জন্য আমি কোনো শিডিউল কিনিনি। বরং তারা আদালতের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে বালু তুলতে চায়, যা পরিবেশ ধ্বংস করবে।’
অন্যদিকে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন বলেন, বালুমহাল ইজারা নিয়ে কেউ ডিবি পুলিশ দ্বারা অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।
প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা-১ ও যাদুকাটা-২ বালুমহাল দুইটি চলতি বাংলা ১৪৩২ সনে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ ১০৭ কোটি টাকায় ইজারা হয়। যাদুকাটা-১ এর ইজারাদার নাছির মিয়া এবং যাদুকাটা-২ এর ইজারাদার শাহ্ রুবেল। স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনা রয়েছে, বিএনপির একাধিক প্রভাবশালী নেতা এই ব্যবসায় অংশীদার। এর আগে আওয়ামী লীগের শাসনামলে এই বালুমহালে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ছিল। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও শেষ সময়ে এই ইজারায় যুক্ত ছিলেন বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে।