- নভেম্বর ১৩, ২০২৫
- জাতীয়
- 2
নিউজ ডেস্কঃ আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোট আয়োজনের কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ ঘোষণা দেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গণভোটের দিন চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে ভোটাররা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে মতামত জানাবেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’ সূচক হলে কী হবে সে ব্যাপারে ভাষণে তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘না’ সূচক হলে তখন কী হবে- সে ব্যাপারে ভাষণে কিছু বলা হয়নি। ফলে এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানান প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘না’ সূচক হলে আদৌ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হবে কি না? নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে যে দল ক্ষমতায় আসবে সেই দল কি দ্বিতীয় দফায় গণভোটের আয়োজন করবে? নাকি বর্তমান প্রচলিত সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করা হবে?
গত ২৮ অক্টোবর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন (এনসিসি) প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের সুপারিশ জমা দেয়। ওইদিন রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশন এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের কাছে প্রশ্ন রাখেন গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত না সূচক হলে তখন কী হবে?
এ প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক আলী রীয়াজ সেসময় বলেন, গণভোটে পাস না হলে পাস হবে না। তার মানে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। এ সময় তিনি বলেন, আপনাকে আমি দুটি উদাহরণ দেই। চিলিতে দুই দুইবার কমপ্লিট কনস্টিটিউশন রেফারেন্ডামে দেওয়া হয়েছে, দুইবারই ফেল করেছে। প্রথমবার একটা সংবিধান তৈরি করে দেওয়া হলো, গণভোটে সেটা হারলো। কেউ কেউ বললো এটা অনেক বেশি দক্ষিণপন্থি হয়ে উঠেছিল অথবা বামপন্থি হয়ে উঠেছিল, একেকজন একেক রকম ব্যাখ্যা দিলো। তারপরে আবার এটার সংশোধন, সংযোজন করা হয়েছে, আবার গণভোটে দেওয়া হয়েছে- আবারও ফেল করেছে। পাস না করলে তার মানে হচ্ছে যে পাস হলো না। জনগণ তাহলে গ্রহণ করছেন না।
তিনি আরও বলেন, এজন্য আমি বলছি আবার জনগণের ওপর আস্থা রাখুন। আপনার বা আমার পক্ষপাত অবশ্যই আছে। আমার দিক থেকে আমি বলতে পারি, সুস্পষ্টভাবে বলতে পারি, বাংলাদেশের রাষ্ট্র সংস্কার প্রয়োজন এবং সেজন্য এই সংস্কারগুলো করা জরুরি। এটা শুধুমাত্র প্রথম পদক্ষেপ, আরও অনেক রকম সংস্কার করতে হবে। সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। এটা আমার অবস্থান। আপনার অবস্থান ভিন্ন হতে পারে। আপনি ভোট দেবেন না আমি ভোট দেবো বা অন্য কেউ অন্য সিদ্ধান্ত নেবে। ফলে গণভোট হলে কী হবে এ বিবেচনা না করাই ভালো।
এদিকে, অধ্যাপক আলী রীয়াজকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (উপদেষ্টা পদমর্যাদার) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাকে এ নিয়োগ দিয়ে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
সরকারের এক সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবেন।
গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত ‘হ্যাঁ’ হলে যা হবে
গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’ সূচক হলে কী হবে সে বিষয়েও ব্যাখ্যা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’ সূচক হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। এই প্রতিনিধিরা একই সঙ্গে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পরিষদ তার প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ থেকে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। এর মেয়াদ হবে নিম্নকক্ষের শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা অনুসারে সংবিধানে জুলাই জাতীয় সনদ অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটিও আজ অনুমোদিত আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
