- জুন ১০, ২০২১
- শীর্ষ খবর
- 321
নিউজ ডেস্কঃ সিলেট জেলা বারের আইনজীবী আনোয়ার হোসেন হত্যার পূর্বেই জেলা ছাত্রদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান চৌধুরী মাহির সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন শিপা বেগম।
হত্যা মামলার পলাতক আসামী শাহজাহান শিপার বেগমের কোন আত্মীয় নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের দুজনের পরিচয়। এরপর মন দেয়া নেয়া শুরু তাদের। কয়েকদিন মোবাইল ফোনে কথা বলার পর এরপর দুজনের সাক্ষাৎ হয়। আইনজীবী আনোয়ার হোসেন প্রতিদিন সকালে কোর্টে চলে যাওয়ার পর মাহি আনোয়ার হোসেনের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন। রিমান্ডে থাকা শিপা বেগম পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। ৫দিনের রিমান্ডের বুধবার (৯ জুন) ২দিন অতিবাহিত হয়েছে।
এদিকে আনোয়ার হোসেনের ময়নাতদন্তের জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) ইয়াছিন আলী আদালতে লাশ কবর থেকে উত্তোলনের জন্য আবেদন করলেও এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন আদেশ হয়নি বলে বৃহস্পতিবার (১০ জুন) জানান। তিনি বলেন, আদালতের আদেশ পেলে আইনজীবী আনোয়ার হোসেনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলন করা হবে। এছাড়াও রিমান্ডে থাকা শিপা বেগম পুলিশকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে তিনি জানালেও তদন্তের স্বার্থে তিনি কোন তথ্য দিতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, মামলার অগ্রগতি হচ্ছে। সেই সাথে মামলার অন্য আসামীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া শিপা ও মাহির কললিস্ট সংগ্রহের জন্য পুলিশ আবেদন করেছে। কললিস্ট পেলে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২ দিনের রিমান্ডে থাকা শিপা বেগম পরকীয়া প্রেমিক শাহাজাহান চৌধুরী মাহি সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন। মাহি কোথায় থাকেন, কি করেন, কিভাবে তাদের দুজনের পরিচয় এসব বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দিয়েছেন শিপা। এমনকি মাহি ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত। সেই সাথে মাহির ব্যবহৃত ইয়ামাহা মোটরসাইকেলে করে ঘুরেছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছে শিপা। ফেসবুকেরি মাধ্যমে মাহির সাথে পরিচয় হয় শিপার। এরপর দুজনই জড়িয়ে পড়েন পরকীয়া প্রেমে। শিপা বেগম বিবাহিত ও তার দুসন্তান রয়েছে বলে তিনি মাহিকে জানালেও মাহি তা মেনে নিয়ে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি মিপা বেগম মাহিকে জানিয়েছে তার স্বামী আনোয়ার হোসেনের সাথে দীর্ঘদিন থেকে সাংসারিক দূরত্বের সৃষ্টি হয়। যার জন্য তারা দু’জন দুই কক্ষে বসবাস করতেন। আনোয়ার হোসেন মৃত্যুর প্রায় ৩ মাস আগ থেকেই তারা একে অন্যের প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। তবে আনোয়ার হোসেন মৃত্যুর পেছনে কোর রহস্য আছে কিনা সেবিষয়ে পুলিশ তাকে আরও ৩দিন জিজ্ঞাসাবাদ করবে। এরপর শিপা বেগম দোষ স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে আগ্রহী থাকলে তাকে আদালতে নেয়া হবে।
পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন, মাহি গ্রেফতার এড়ানোর জন্য তার ফেসবুক আইডি ডি-অ্যাকটিভ করে রেখেছে। তবে পুলিশ প্রযুক্তির সহায়তায় মাহির অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি মোবাইল নাম্বার ট্র্যাকিংয়ে রেখেছে পুলিশ।
সূত্র জানায়, গত ৩০ এপ্রিল রমজানের দিনে মারা যান এডভোকেট আনোয়ার হোসেন। ফজরের নামাজের পর তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। বিকাল ৩টায় স্ত্রী শিপা বেগম স্বজনদের ফোন করে জানান, আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর খবর। আনোয়ার হোসেনের বাড়ি সদর উপজেলার শিবের বাজারের দীঘিরপাড় গ্রামে। আনোয়ার হোসেনের নিজস্ব বাসা রয়েছে নগরীর তালতলা এলাকায়। সেখানে তিনি স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন। তার স্ত্রী শিপা বেগমের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার রণকেলী গ্রামে। স্বামীর মৃত্যুর পর শিপা তার স্বজনদের জানিয়েছিলেন, ডায়াবেটিস নীল হয়ে তার স্বামী মারা গেছেন। স্বজনরা স্ত্রীর কথা বিশ্বাস করে স্বজনরা মৃত্যু নিয়ে কোনো সন্দেহ করেননি। তারা আনোয়ার হোসেনের লাশ গ্রামের বাড়ি শিবের বাজারের দীঘিরপাড়ে নিয়ে সমাহিত করেন। আনোয়ারের মৃত্যুতে সবাই শোকে কাতর তখনই খবর আসে শিপা বেগমের নতুন বিয়ের। স্বামীর বাড়ির লোকজনের তখন খবরটি বিশ্বাস হয়নি।
তারা খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন- আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর ১০ দিনের মাথায় শিপা বেগম তার খালাতো ভাই মাহিকে বিয়ে করেছেন। মাহির পুরো নাম শাহজাহান চৌধুরী মাহি। তার বাড়ি কানাইঘাটের ঝিঙ্গাবাড়ির উপরপাড়া গ্রামে। এই বিয়ে নিয়েই তাদের সন্দেহ হয়। মোবাইল ফোনে শিপার সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেন মারা যাওয়া আনোয়ার হোসেনের ছোটো ভাই মনোয়ার হোসেন। ফোনে কথা বলার সময় শিপা নিজেই স্বীকার করেন, তিনি মাহিকে দীর্ঘদিন ধরে ভালোবাসেন। এবং তাদের দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে আনোয়ারের মৃত্যুর পর তারা বিয়ে করেছেন। এবং তার পিতা-মাতাসহ পরিবারের লোকজন উপস্থিত থেকেই তাদের বিয়ে পড়িয়েছেন। এরপর থেকে আইনজীবী স্বামী আনোয়ার হোসেনের রেখে যাওয়া বাসাতেই তিনি নতুন স্বামী মাহিকে নিয়ে বসবাস করছিলেন।
মাহি ও শিপা ছাড়া মামলার আসামিরা হলেন- শিপার মা গোলাপগঞ্জের রণকেলী গ্রামের আজমল আলীর স্ত্রী রাছনা বেগম, কতোয়ালি থানার রায়নগর ১০৪নং বাসার মোতাহির আলীর ছেলে এনামুল হাসান, জৈন্তাপুরের হরিপুর গ্রামের মৃত সোনা মিয়ার ছেলে এসএম জলিল, বিমানবন্দর থানার কালাগুল এলাকার মৃত কালা মিয়ার ছেলে জাকির আহমদ, গোয়াইনঘাটের ছোটখেল গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে ফয়সল আহমদ ও সুবিদবাজার এলাকার লন্ডনী রোডের নাইমার।
মামলার এজাহারে নিহত আনোয়ার হোসেনের ভাই মনোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, তার ভাই এডভোকেট আনোয়ার হোসেন সকালে যখন কর্মস্থলে চলে যেতেন তখন মাহি মোটরসাইকেল নিয়ে তার বাসার সামনে আসতো। এ সময় শিপাকে নিয়ে মাহি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করতো। এডভোকেট আনোয়ার হোসেন বাসায় আসার আগেই মাহি প্রেমিকা শিপাকে বাসার সামনে এসে নামিয়ে দিয়ে যেতো। বিষয়টি জানার পর এডভোকেট আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে শিপা বেগমের সাংসারিক দূরত্বের সৃষ্টি হওয়ায় তারা দু’জন দুই কক্ষে বসবাস করতেন। সূত্রঃ সিলেট ভিউ