• জুন ১৪, ২০২১
  • লিড নিউস
  • 448
খালি মাঠ পাচ্ছেন না নৌকার মাঝি হাবিব

নিউজ ডেস্কঃ নৌকা মার্কা মানেই পাস। সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন ঘিরে এমন ধারণা এখন নেতাকর্মী থেকে সাধারণ লোকজনের। তাইতো রাঘব বোয়ালদের পাশাপাশি বিভিন্ন সারির ২৫ নেতা নৌকার মাঝি হওয়া প্রত্যাশায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনেন।

কিন্তু গত ১২ জুন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিবকে নৌকা মার্কার প্রার্থী ঘোষণার পর এখন সাইড বেঞ্চে মনোনয়ন প্রত্যাশী অপর ২৪ জন। দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে না পারলেও তারা এখন যন্ত্রণাকাতর। মনের ভেতর চেপে রাখছেন না পাওয়ার ক্ষোভ। সেই ক্ষোভের ঢেউয়ে হাবিবকে নৌকা চালিয়ে যেতে হতে পারে ধারণা তৃণমূল নেতাকর্মীদের অনেকের।

এ আসনে আবার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মিত্র দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক লাঙলের খুঁটি ধরেছেন।

জাপার পুরনো দুর্গ লাঙল হাতে আবারো চাষ করতে চান সিলেট-৩ আসন। ১৯৯১ সালে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আতিক হেরেছিলেন লাঙল প্রতীকের আব্দুল মুকিত খানের কাছে। এরপর সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের হাতে দীক্ষা নিয়ে জাপায় হিজরত (পাড়ি দেন) করেন।

প্রায় ৩ দশক পর ২০২১ সালে এসে সেই নৌকার বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে আতিককে। অবশ্য আতিক এখন আর আওয়ামী লীগের নয়, মনে মননে জাতীয় পার্টির এবং নীতিনির্ধারণী কমিটিরও সদস্য পদে আসীন। এ অবস্থায় চেনা প্রতীকে কেবল অনেকটা ‘অচেনা’ নৌকার মাঝি হাবিবুর রহমানকে মোকাবিলায় নির্বাচনী মাঠে নেমেই লাঙলের বিরাট শোডাউন দেখিয়েছেন রোববার (১৩ জুন)। তবে জাতীয় পার্টিতে অনেক নেতা আবার আতিকুর রহমানের প্রার্থী হওয়া মেনে নিতে পারছেন না। যে কারণে সিলেটে পৌঁছেই জাপার প্রথম সারির অনেক নেতাকে পাশে পাননি। তাতে তুষ থেকে আগুনের ধুপ স্পষ্টভাবেই অনুমান করতে পারছেন নেতাকর্মীরা।

বিশেষ করে আতিকুর রহমান সিলেট-৩ ছেড়ে হবিগঞ্জের মাধবপুর নানা বাড়ির চলে যাওয়ায় এ আসনে দীর্ঘদিন থেকে লাঙলকে জিইয়ে রাখছিলেন জাপার আরেক নেতা উছমান আলী। তার দীর্ঘদিনের চাষ করা মাঠে (সিলেট-৩ আসন) শূন্য হতেই লাঙল কেড়ে নিলেন আতিক। ফলে উছমান আলীর বাড়া ভাতে ছাঁই দেওয়া পছন্দ হয়নি তার কর্মী-সমর্থকের।

তাছাড়া এ আসনের সদ্য জাপায় যোগদান করে কেন্দ্রীয় সদস্য পদ লাভকারী ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বাবুলকে আতিকের বিরুদ্ধে পার্টির মনোনয়ন দিতে সমর্থন ছিল অন্তরালে। এ নিয়ে তারা বৈঠকও করেছিলেন। যদিও নেতারা পরে বাবুলকে সমর্থনের বিষয়টি অস্বীকার করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভ করে চমক দেখিয়েছেন হাবিবুর রহমান। ফলে তার অনুসারি নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করলেও বিষাদের করুন সুর দলের মনোনয়ন বঞ্চিতদের শিবিরে। যদিও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভের পর হাবিব জানিয়েছেন, যারা দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন সবাই যোগ্য, আমার নেতা। কিন্তু তাঁ এ সরল স্বীকারোক্তি বঞ্চিতদের মনে কতটুকু ছেদ ফেলবে, তা কেবল নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার মাধ্যমে প্রমাণ মিলবে। কেননা প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদের অনুসারিদের সঙ্গে নির্বাচনী এলাকায় চরম দ্বন্দ্ব চলে আসছে, জনস্রোতি রয়েছে। হাবিব অনুসারিদের চিন্তায় ছিল ফারজানা সামাদ মনোনয়ন পেয়ে সাবেক এমপি ঘরানার কর্মী সমর্থকরা উগ্র আচরণ দেখাবে। তেমনি নৌকা প্রতীকে হাবিবের মনোনয়ন লাভ সাবেক এমপির নেতাকর্মীদের মনে এখন থেকেই দুশ্চিন্তার উদ্রেক হয়েছে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ৩ বারের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও বিএমএ’র কেন্দ্রীয় মহাসচিব ড. এহতেশামুল হক দুলালসহ মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ থাকলে তার প্রভাব নির্বাচনী মাঠে পড়তে পারে। এতে অদেখায় নৌকায় সিঁদ কাটা হতে পারে। অবশ্য স্থানীয় লোকজন বলছেন, নৌকা মার্কা যার, ভোটের জোর সেদিকে। তবে একেবারে খালি মাঠ পাচ্ছেন না হাবিব। লাঙল মার্কায় আতিক ছাড়াও সাবেক দু’বারের সংসদ সদস্য শফি আহমদ চৌধুরীকে মোকাবিলা করতে হতে পারে তাকে।

বিএনপি নির্বাচনে না এলেও নিজের জনপ্রিয়তাকে যাচাই করতেই যেন মাঠে নামছেন এ আসনের সাবেক দু’বারের সংসদ সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে এরই মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতর থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তিনি। ফলে নৌকা-লাঙলের মাঝখানে ব্যক্তি শফি চৌধুরীও আরেক বাধা। যদিও তিনি গত এক যুগের বেশি সময় নির্বাচনী এলাকায় মানুষের সংস্পর্শে ছিলেন না। করোনাকালেও এলাকার মানুষের পাশে দেখা যায়নি তাকে। যেটা প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ করে দেখিয়েছেন।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জের একাংশ নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ এ বছরের ১১ মার্চ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। করোনা পরিস্থিতিতির কারণে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ৯০ দিন বিলম্বের পর আগামী ২৮ জুলাই এ আসনে ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশন।