- ডিসেম্বর ৯, ২০২১
- লিড নিউস
- 370
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ পানির দেশে পানির অভাব! কথাটা শুনতে অবাক মনে হলেও সত্য। হাওর-বাঁওড়ের জেলা সুনামগঞ্জের পর্যটন উপজেলা হিসেবে পরিচিত তাহিরপুরের বড়গোপ টিলার বাসিন্দাদের চলছে পানির অভাব। টিউবওয়েলের এক কলস পানি ২০ টাকা ধরে কিনতে হচ্ছে তাদের। যুগ যুগ ধরে ভোগান্তি শিকার হয়ে আসছে আদি এই বাসিন্দারা।
পাহাড়, নদী আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বড়গোপ টিলা। সবুজে মোড়ানো উঁচু টিলার এক পাশে পাহাড়, অন্য পাশে স্বচ্ছ জলের জাদুকাটা নদী। টিলার ওপর দাঁড়ালে হাতছানি দেয় মেঘ-পাহাড়। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্যের মেলবন্ধন দেখতে বড়গোপ টিলায় ছুটে আসেন হাজারো পর্যটক।
তবে সৌন্দর্যের এ লীলাভূমি পর্যটকদের জন্য চোখ জোড়ানোর হলেও টিলার ওপরের বাসিন্দাদের দুর্দিন কারও চোখে পড়ে না। সামান্য খাবার পানির অভাবে যুগ যুগ ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। বর্ষায় গোসল করতে হয় টিলার বন্ধুর পথ মাড়িয়ে সমতলের ঝরনা বা জাদুকাটায় এসে।
এই বড়গোপ টিলায় মোট ৩১২ একর জমি রয়েছে। ১৯৪২ সালে বড়গোপ টিলায় ১৩টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবার বাস করত। বর্তমানে ৩৩টি নৃগোষ্ঠী ও ১৫টি বাঙালি পরিবার বাস করে। ২০০৮ সালে এখানে একটি নলকূপ স্থাপন করলেও প্রথম থেকেই এটি অকেজো। টিলায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ও উপাসনালয়ও (গির্জা) রয়েছে।
ভারতীয় সীমান্তসংলগ্ন বড়গোপ টিলায় শুষ্ক মৌসুমে ঝরনায় পানি সরবরাহ কমে যাওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে এই ৪৮ পরিবারে। ফলে পানি কিনে খেতে হচ্ছে তাদের। এক কলস পানি ২০ টাকা আর এক ড্রাম (৩৫ লিটার) পানির জন্য খরচ হচ্ছে ১০০ টাকা। কয়েক যুগ ধরে এ অবস্থা চললেও টিলাবাসীর পানির সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই।
স্থানীয়রা বলছেন, পার্শ্ববর্তী সীমান্তের ওপারে বড় মেঘালয়ের বাসিন্দাদের উন্নত পানি সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। ওখানে বৈদ্যুতিক মোটর দিয়ে বাসিন্দাদের ঘরে ঘরে পানি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। মেঘালয়ের তুলনায় বড়গোপ টিলা হাজার গুণ ছোট। তবু কেন পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে না, প্রশ্ন তাদের।
কড়ইগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তৃপ্ত বনোয়ারী বলেন, আমরা টিলার ওপর প্রায় ৪৮টি পরিবার বসবাস করি। সবারই খাওয়ার পানি কিনতে হয়। টিলার নিচ থেকে ড্রাম প্রতি ১০০ টাকা করে কিনি আমরা। তিনি আরও বলেন, আমরা অনেকবার বলেছি আমাদের পানির সংকট নিরসনের জন্য। কিন্তু হচ্ছে না। তাই আমরা চিন্তা করেছি টিলার পশ্চিম-উত্তর দিকের বাসিন্দারা মিলে সংগঠন করব। সেখানে সবাই টাকা জমিয়ে টিলার ওপর পানির ট্যাংক করে নিচ থেকে মোটর দিয়ে পানি সংরক্ষণ করব।
বড়গোপ টিলার বাসিন্দা মাদুরি আজম বলেন, ঝুঁকি নিয়ে সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে পানি সংগ্রহ করি। সেখানে এখন পর্যটকেরা মল ত্যাগ করে নষ্ট করে ফেলেছে। তাই আমরা নিরাপদ পানির জন্য টাকা দিয়ে পানি কিনতে হচ্ছে আমাদের। তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, সরকার সম্প্রতি বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছে। এখন মোটর দিয়ে সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা করলে জীবনযাপন আরও সহজ হতো তাদের।
বড়গোপের বাসিন্দা আলাউদ্দিন বলেন, ৫০০ ফুট উঁচু টিলায় ওঠানামা করে পানি সংগ্রহ করা খুবই কষ্টকর। তাই মানবিক ও স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় এখানে মোটরের সাহায্যে পানি সরবরাহ করার দাবি জানাচ্ছি।
তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবির বলেন, এ বিষয়টি আগে আমরা জানতাম না। এখন খুব দ্রুত সবার সঙ্গে কথা বলে পানির সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেব।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্দু চৌধুরী বাবুল বলেন, আমরা খুব শিগগিরই পানির সংকট নিরসনের জন্য কাজ শুরু করে দেব। এ জন্য টিলার ওপরে পানির রিজার্ভ ট্যাংক করে দুটি সাবমার্সিবল পাম্প বসানো হবে। সেখান থেকে সাপ্লাই করে বাসিন্দাদের কাছে পানি পৌঁচ্ছে দেওয়া হবে।