• এপ্রিল ২, ২০২২
  • জাতীয়
  • 267
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা : দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসছে ঢাকা-ওয়াশিংটন

নিউজ ডেস্কঃ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার (৪ এপ্রিল) ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সামনের দিনগুলোতে একসঙ্গে চলা, র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, বিনিয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা ইস্যু, খুনি রাশেদকে ফেরতসহ নতুন নতুন ক্ষেত্রে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দেবে ঢাকা।

শুক্রবার (১ এপ্রিল) ঢাকা-ওয়াশিংটনের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ইস্কাটনে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমন ইঙ্গিত দেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, শনিবার রাতে ওয়াশিংটনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন ড. মোমেন। পাঁচ দিনের সফরে কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আগামী সোমবার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন ড. মোমেন ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন।

বৈঠকে র‌্যাবের বিরুদ্ধে দেওয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি ঢাকা তুলবে কি না— ড. মোমেনের কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে মোমেন বলেন, ‘আমরা এটা তুলব। আর তারা বলবে, নিশ্চয়ই একটা প্রসেস আছে। আমরা তাদের বলতে চাই যে এ প্রতিষ্ঠানটা হওয়ায় আমাদের দেশে সন্ত্রাস কমেছে। শুধু আমাদের দেশে সন্ত্রাস নয়, আমাদের আশপাশের দেশের সন্ত্রাসটা অনেক কমে গেছে এ প্রতিষ্ঠানের জন্য।’

‘দে (র‌্যাব) আর ভেরি এফেক্টিভ, এফিশিয়েন্ট। সুতরাং তোমরা ওদের (র‌্যাব) সম্মান করা উচিত। তোমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছ, আমরা বুঝলাম তোমাদের একটা প্রসেস আছে। আমরা আশা করব, তারা ইতিবাচক সাড়া দেবে,’ যোগ করেন তিনি।

গত ২০ মার্চ ঢাকায় বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অষ্টম অংশীদারিত্ব সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপ শেষে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড সাংবাদিকদের জানান, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার একটি জটিল প্রক্রিয়া। এ বিষয়ে আরও কাজ করতে হবে। তবে নিষেধাজ্ঞার পর তিন মাস র‌্যাবের কর্মকাণ্ডে তার দেশ সন্তুষ্ট বলেও জানান আন্ডার সেক্রেটারি।

বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এবার আমার সফরটা হচ্ছে আগামী ৫০ বছরে কীভাবে আমরা সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি সেসব নিয়ে। ইনভেস্টমেন্ট আরও বাড়াতে পারি, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব। আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যু আসবে। জলবায়ু ইস্যুও থাকবে।

ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঢাকার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছাড়াও নীতিগত সম্পর্ক আছে— উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের শুধু ব্যবসায়িক সম্পর্ক নয়। তাদের সঙ্গে আমাদের নীতিগত একটা সম্পর্ক আছে। তোমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস কর, আমরাও তাই করি। তোমাদের আড়াইশ বছরের গণতন্ত্র। সেখানেও দুর্বলতা আছে। আমাদের ৫০ বছরের গণতন্ত্র। মাঝখানে বহু বছর…৭৫ থেকে বহু বছর গণতন্ত্র ছিল না। তবুও আমরা ভালো করছি। গণতন্ত্র কোনো সংজ্ঞায় চলে না। এটা ইনভলভিং প্রসেস, ডায়নামিক প্রসেস। সুতরাং আমরা তোমাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই।

তিনি বলেন, আমরা মানবাধিকারে খুব বেশি গুরুত্ব দেই। তোমরাও (যুক্তরাষ্ট্র) দাও। তাহলে আমাদের একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ গণতন্ত্রের কারণেই সৃষ্টি হয়েছে। আমরা হচ্ছি পৃথিবীর মধ্যে একটি আদর্শ, যেটা গণতন্ত্রের জন্য, মানবিকতার জন্য সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে। সুতরাং তোমাদের সঙ্গে আমাদের ঝগড়ার কোনো কারণ নেই। আমরা মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় দেশ। তোমাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আমাদের যথেষ্ট কাজ করার সুযোগ আছে।

নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, তোমরা নারীদের কথা বলো। আমরা তো বহুদিন থেকে উইমেন ইমপাওয়ারমেন্ট (নারীর ক্ষমতায়ন) নিয়ে কাজ করছি। তোমরা ১৯২৬ সালে নারীদের ভোটাধিকার দিলা। আমরা সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে ভোটাধিকার দিয়েছি।

জলবায়ু পরিবর্তন ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ক্লাইমেট ইস্যু আমাদের জন্য বড় ইস্যু। এক্ষেত্রে আমাদের কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ আছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতেও আমরা আলোচনা করব।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফেরতের প্রসঙ্গ বৈঠকে তোলা হবে কি না— জানতে চাইলে মোমেন বলেন, আমরা এটা তুলব।

অস্ত্রের ভান্ডার সৃষ্টি করতে চাই না

আগামী ৬ এপ্রিল ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সংলাপ বসবে। এরই মধ্যে ওয়াশিংটন মিলিটারি ইস্যুতে বাংলাদেশকে জিসমিয়া ও আকসা নিয়ে দুটি চুক্তির খসড়া কপি দিয়েছে। বাংলাদেশ চুক্তি দুটি করবে কি না, কিংবা এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কি— জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, সেটা আমি বলতে পারব না। তবে আমরা ঝাপ দিয়ে পড়ব না। যারা এগুলো দেখার তারা এক্সামিন করে দেখবে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র কেনার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করব না। আমরা তো অস্ত্রের ভান্ডার সৃষ্টি করতে চাই না। কারণ আমাদের প্রয়োজন নেই। আমরা খুব শান্তি প্রিয় দেশ। সব প্রতিবেশীর সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক। অস্ত্র সংগ্রহ করলেই যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব আসে। আমরা ওগুলোতে নেই। তোমাদের (যুক্তরাষ্ট্র) অন্যান্য প্রযুক্তি আছে, সেটা আমাদের দাও। অস্ত্র আমাদের খুব কম প্রয়োজন।

কারও চাপে পড়ে বাংলাদেশ কিছু করে না— উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা চাপের মধ্যে কিছু করব না। চাপের মুখে আমরা কিছু করব না। আমরা আমাদের দেশের মঙ্গলের জন্য যা যা প্রয়োজন সেগুলো করব।

ইন্দো-প্যাসিফিক প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের রিকুয়েস্ট করেনি। এটা একটা দর্শন। এ দর্শনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক মোটামুটি এক। তারা যেটা বোঝাতে চায়, অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অঞ্চল। আমরাও সেটা চাই। কোনো রাষ্ট্র এটাকে বাধাগ্রস্ত করুক তারা এটা চায় না, আমরাও চাই না। এক্ষেত্রে আমরা মোটামুটি এক।

তিনি বলেন, কিন্তু তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) ভয়টা হলো, চায়না তো এখানে মাতব্বরি করছে। এ কারণে তারা একটা ভয় পাচ্ছে। কিন্তু আমরা কারও লেজুড় হতে চাই না। এটা বাধাগ্রস্ত হোক সেটা আমরা চাই না। এটা রাজনীতির একটা চেসপোর্ট হোক এটা আমরা চাই না।