• মে ২, ২০২২
  • শীর্ষ খবর
  • 305
পর্যটকদের বরনে প্রস্তুত সিলেট

নিউজ ডেস্কঃ করোনার কারণে গত দুই বছর ঈদসহ বিভিন্ন উপলক্ষে ঘরবন্দি সময় কেটেছে মানুষের। সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে পরিবার নিয়ে পর্যটনকেন্দ্রে ঘোরাঘুরিও ছিল সীমিত। কিন্তু এবার ঈদে কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় উচ্ছ্বসিত সিলেটের পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। পর্যটন নির্ভর পেশার মানুষরা ইতিমধ্যে পর্যটক বরণে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছেন। এখন শুধু অপেক্ষা পর্যটকের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন বন্ধ আর ঋতুতে বর্ষাকাল চলায় জল, পাহাড়-টিলা, নদী আর পাথর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে্য ভরপুর সিলেটের গোয়াইনঘাটের জাফলং, বিছানাকান্দি, জৈন্তাপুরের সারি নদী, মিঠাপানির একমাত্র জলারবন রাতারগুল, কোম্পানিগঞ্জের সাদাপাথর এবং উৎমা ছড়ায় সবুজের সমারোহ আরও বেড়েছে। ফলে পর্যটকদের চোখ জুড়াবে তা বলাই যায়। এছাড়া নগরীর এম এ জি ওসমানী শিশুপার্কও শিশুদের জন্য সাজানো হয়েছে।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা এই পর্যটনকেন্দ্রগুলোকে ডাকা হয় ‘প্রকৃতি কন্যা’ নামেও। পর্যটনকেন্দ্র জাফলং সবুজ পাহাড়ের পাদদেশে পিয়াইন নদ, যেখানে দুই পাহাড়ের মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে স্বচ্ছ জলের ধারা। এছাড়া মেঘালয় রাজ্যের পাহাড় ঘেঁষে স্বচ্ছ পানিতে সাদাপাথর ও পাহাড় থেকে নেমে আসা পানিতে জলকেলি খেলতে কোম্পানিগঞ্জের সাদাপাথর এলাকা পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

মিঠাপানির একমাত্র জলাবন রাতারগুলে পানিতে হিজল-করচ গাছের ভেসে থাকা ঝোপের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা নৌকা চড়তে অনেকেই আসেন এ স্থানে। এবার দীর্ঘ দিন পর্যটকদের আনাগোনা না থাকায় নবরূপে পত্র পল্লবে সেজেছে রাতারগুল। বর্ষায় ঈদ হওয়ায় এবার রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক সিলেটে আসবেন বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

প্রকৃতির কাছাকাছি কিংবা নদী-ঝর্ণার স্পর্শ নিতে দেশ-বিদেশের সাধারণ মানুষের অন্যতম পছন্দের স্থান সিলেট। কক্সবাজারের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্যটকের সমাগম ঘটে পাহাড় টিলা, চা-বাগানে ঘেরা দুটি পাতা একটি কুঁড়ির সিলেটে। সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার, চা-বাগান, জাফলং, ভোলাগঞ্জ, রাতারগুল ঘুরতেই বেশি ভালোবাসেন পর্যটকরা।

তাই পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত সিলেটের হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট। এরইমধ্যে শেষ হয়ে গেছে বেশিরভাগ হোটেলের বুকিং। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবারের ঈদ হবে বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার মৌসুম। পর্যটকদের ভ্রমণ নিরাপদ করতে প্রস্তুত ট্যুরস্ট পুলিশও।

সিলেটে নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পর্যটক। পর্যটক বাড়ায় বাড়ছে হোটেলও। এক সময় মাজার এলাকায় হাতেগোনা কয়েকটি হোটেল থাকলেও এখন গোটা শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মানের শতাধিক হোটেল। আর পর্যটকদের চাহিদা বিবেচনায় শহরের বাইরে গড়ে উঠেছে অনেক রিসোর্ট। ঈদে পর্যটকের সেবা দিতে এসব হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট নিয়েছে নানা প্রস্তুতি। হোটেলের বুকিংও শেষ পর্যায়ে। অধিকাংশ হোটেল এরই মধ্যে ৬০ ভাগ বুকিং হয়ে গেছে।

সিলেটে বেড়ানোর জায়গার যেন শেষ নেই। উঁচু-নিচু পাহাড়ে ঘেরা সিলেটের ঢেউ খেলানো চা-বাগান নিমিষেই পর্যটকের মন কাড়ে। জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য, জাফলংয়ের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, রাতারগুলের জলারবন, পান্তুমাইয়ের ঝরনাধারা, বিছনাকান্দি ও লালাখালের স্বচ্ছ জলের হাতছানি, লোভাছড়ার মন মাতানো সৌন্দর্য আর সারি সারি পাথরের স্তপ পর্যটকদের টেনে আনে বারবার।

পর্যটন পুলিশের জাফলং সাবজোনের পরিদর্শক মো. রতন শেখ জাগো নিউজকে বলেন, পর্যটকরা যাতে নিরাপদে প্রাণভরে আনন্দ উপভোগ করতে পারে তা নিশ্চিতে কাজ করছি। আশা করছি এবারের ঈদের ঘুরাঘুরি নিরাপদই হবে।

সিলেট হোটেল-মোটেল রেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুমাত নুরী বলেন, নগরকেন্দ্রিক হোটেল-মোটেলগুলোর অবস্থা ভালো। অগ্রিম বুকিং শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় গত দুই বছরের ক্ষতি এবার কাটিয়ে উঠবেন আশা করেন তিনি।

নগরের আম্বরখানা এলাকার ব্রিটানিয়া হোটেলের ব্যবস্থাপক (বিপনন) কাওসার খান বলেন, ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি কক্ষ বুকিং হয়েছে। এখনও অনেকে বুকিং দিচ্ছেন। যারা বুকিং করছেন, তাদের বেশির ভাগই সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী।

সিলেটের নাজিমগড় রিসোর্টের মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) শায়রুল আনাম বলেন, এখন পর্যন্ত রিসোর্টের ৪০ শতাংশ বুকিং হয়েছে। করোনার আগে এমন সময়ে রিসোর্ট জমজমাট থাকত।

সিলেট চেম্বারের সভাপতি ও হোটেল ইন এর মালিক তাহমিন আহমদ বলেন, গত দুই বছর হোটেল ব্যবসায়ীরা দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছেন। আশা করছি এবার সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারবো। এবার ঈদের ছুটিতে পর্যটক সমাগম অতীতের চেয়ে বেশি হবে আশা করছি।