• মে ১৮, ২০২২
  • লিড নিউস
  • 254
সিলেটে ১৮ বছরের মধ্যে ভয়াবহতম বন্যা, বিদ্যুৎ সরবরাহ বিপর্যস্ত

নিউজ ডেস্কঃ সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। নগরীর উপশহর ও দক্ষিণ সুরমাসহ কয়েকটি এলাকার বিদ্যুতের সাব স্টেশন পানিতে তলিতে গেছে। গত মঙ্গলবার থেকে এসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া বাড়িঘরে পানি উঠে যাওয়ায় কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, সদর ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বেশিরভাগ এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিক সামির মাহমুদ বলেন, ২০০৪ সালের পর সিলেটে এমন বন্যা আর হয়নি। গত ১৮ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বড় বন্যা।

এ পরিস্থিতির কারণ ব্যাখ্যায় এ পরিবেশ আন্দোলন কর্মী বলেন, সুরমার তলদেশ ভরাট হওয়ার কারণে উজান থেকে নেমে আসা ঢল ধারণ করতে পারেনি নদী। আমি বলব, এই বন্যায় মানুষের হাত আছে। কারণ এই সুরমায় সবচেয়ে বেশি ময়লা ফেলেন কালীঘাটের ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন প্রায় ৫০ টন ময়লা ফেলেন কালীঘাটের ব্যবসায়ীরা। তাই আজ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তাঁরা।

বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদীসহ জেলার দুই নদীর চার পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্ট দিয়ে বিপৎসীমার ১২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি সিলেট সদর পয়েন্ট দিয়ে বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশিদ পয়েন্ট দিয়ে বিপৎসীমার ১৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বন্যার পানি উঠে যাওয়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোর মানুষ ভুগছেন দৈনন্দিন ব্যবহার্য ও খাওয়ার পানির সংকটে। এ অবস্থায় সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছেন দক্ষিণ সুরমার উপজেলার বাসিন্দারা। সুরমা নদীর দক্ষিণ পাড়ের প্রায় সব এলাকাই বন্যাকবলিত হওয়ায় ৪২ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

দক্ষিণ সুরমার পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে সিলেট নগরীর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২-এর অধীনে থাকা শাহজালাল উপশহর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষজন। বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামছ-ই-আরেফিন বলেন, ‘শাহজালাল উপশহর সাব স্টেশনে এখনো পানি ওঠেনি। তারপরও বিদ্যুৎ বন্দ রাখা হয়েছে। কারণ উপশহরের প্রায় সব বাসার বিদ্যুতের মিটার নিচতলায় বা আন্ডারগ্রাউন্ডে। যার ফলে সব মিটারই এখন এই বন্যার পানির নিচে। এ অবস্থায় কোনোভাবেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে না। বিকল্প উপায় হিসেবে পোর্টেবল জেনারেটর দিয়ে পানি ওঠানোর ব্যবস্থা করা যেত, কিন্তু সেটাও সম্ভব হবে না। কারণ বেশিরভাগ মোটর জলমগ্ন রয়েছে। আপাতত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তবে যে হারে পানি বাড়ছে মনে হচ্ছে না এত তাড়াতাড়ি পানি নামবে। তবে আমরা আজ বুধবার উপশহরের ৩০ ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পেরেছি। প্রায় ৭০ ভাগ এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ দেওয়া যায়নি।’

এ ব্যাপারে সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, ‘কিছু জায়গায় সাব স্টেশনের যন্ত্রপাতি পানিতে তলিয়ে গেছে। আবার কিছু জায়গার বাসা বাড়ির মিটার ডুবে গেছে। চলমান এই বন্যার কারণে বেশ কয়েকটি উপজেলাতেও বিদ্যুৎ এ কারণে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে নগরীর ভেতরের কয়েকটি এলাকা ও নগরীর বাইরের বিভিন্ন এলাকায় বন্ধ করা হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। পানি না কমার আগে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করা সম্ভব না।’

এদিকে সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, আগামী ২২ জুন পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, ‘২১ ও ২২ তারিখ বৃষ্টি বাড়বে। তবে ২২ তারিখের পর বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসবে। সিলেটের উজানে ভারতের দিকেও আগামী দুই তিন দিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু এখন প্রি মনসুন (বর্ষার আগের মাস) চলছে তাই সারা মাসই সিলেটে কম বেশি বৃষ্টি হবে।’