• জুন ৯, ২০২২
  • জাতীয়
  • 226
১৪.২৫% ব্যয় বাড়িয়ে পৌনে ৭ লাখ কোটি টাকার বাজেট

নিউজ ডেস্কঃ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা সামলাতে নতুন অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এই ব্যয় বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। আর মূল বাজেটের চেয়ে এটি ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি।

বিদায়ী অর্থবছরে মুস্তফা কামালের দেয়া মূল বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালকে তার চতুর্থ বাজেটটি দিতে হলো এমন এক সময়ে, যখন করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তার কপালে বেশ চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। দিন যতই যাচ্ছে সংকট তত বাড়ছে; দেখা দিচ্ছে নানা চ্যালেঞ্জ।

যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে ওলটপালট করে দিচ্ছে। যুদ্ধের কারণে খাদ্য ও জ্বালানির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ায় বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস। একই কথা বলেছে আইএমএফ। তীব্র খাদ্যসংকটের আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ।

বাংলাদেশেও নানা ক্ষেত্রে যুদ্ধের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং জাহাজ ভাড়া বাড়ায় আমদানি খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে; অস্থির হয়ে উঠেছে মুদ্রাবাজার।

বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। চড়ছে মূল্যস্ফীতির পারদ।

করোনা মহামারির উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের মধ্যে গত দুটি বাজেট (২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছর) দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। আশা করা হচ্ছিল করোনামুক্ত পরিবেশে এবার খোশমেজাজে থেকে বাজেট দেবেন তিনি, তবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ধাক্কায় তছনছ হয়ে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতির দুরবস্থার মধ্যেই ভিন্ন এক চালেঞ্জের মধ্যে নতুন বাজেট দিলেন তিনি। তাই তো তোর বাজেট বক্তৃতায় ঘুরেফিরেই যুদ্ধের প্রসঙ্গটি এসেছে।

গত কয়েক বছরে সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে উন্নয়ন খাতকে। এর মধ্যে কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ শেষের দিকে। নিজস্ব অর্থে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ২৫ জুন এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল ও বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেলের কাজও শেষ হবে এ বছরেই। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজও পুরোদমে এগিয়ে চলেছে।

এসব মেগা প্রকল্প চালু হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভিন্নমাত্রা যোগ হবে, এমনটা প্রত্যাশা নিয়েই ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট দিলেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।

ব্যয়

এবারের ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় খুব বেশি না বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা, যা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এসইসি) সভায় ইতোমধ্যে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

নতুন বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকার। এই ব্যয়ের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় করা হবে ৭৬ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। পণ্য ও সেবার জন্য ব্যয় করা হবে ৩৮ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা।

ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৮০ হাজার ২৭৫ কোটি। ভর্তুকি প্রণোদনা ও নগদ ঋণ বাবদ ১ লাখ ৭৭ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) খরচ করা হবে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৭ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে ২ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা খরচ করা হবে।

আয়

প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কর থেকে পাওয়া যাবে ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আদায় করবে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।

এনবিআরবহির্ভূত কর থেকে আসবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। কর ব্যতীত অন্যান্য খাত থেকে আদায় হবে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

বিদেশি অনুদান পাওয়া যাবে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে আয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।

ঘাটতি ব্যবস্থাপনা

নতুন বাজেটে বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এই ঘাটতি পূরণের জন্য ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়া হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

৫ হাজার ১ কোটি টাকা আসবে অন্য উৎস থেকে। বিদেশি ঋণ থেকে আসবে ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা।

ভর্তুকি এবং প্রণোদনা

প্রস্তাবিত বাজেটে ভর্তুকি প্রণোদনা এবং ঋণ বাবদ রাখা হয়েছে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৯০ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য বাবদ খাদ্য ভর্তুকির জন্য রাখা হয়েছে ৬ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকিতে ব্যয় হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য খাতে ১৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মোট ভর্তুকির পরিমাণ ৪২ হাজার ৪৫ কোটি টাকা।

কৃষিতে প্রণোদনার জন্য রাখা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা ৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

পাটজাত দ্রব্যে প্রণোদনার জন্য ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। প্রবাস আয় বা রেমিট্যান্সের প্রণোদনার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

সামাজিক সুরক্ষা

প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষায় মোট ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা।

গত বছরের ৩ জুন অর্থমন্ত্রী সংসদে যে বাজেট পেশ করেছিলেন, তার আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।