- আগস্ট ১৯, ২০২২
- শীর্ষ খবর
- 201
নিউজ ডেস্কঃ বৃষ্টির ফোঁটায় উর্বর হয় প্রকৃতি। সেই উর্বরতায় চা বাগানে ফোটে একটি কুঁড়িতে দুটি পাতা। ঘনসবুজ পাতাগুলোর গভীর সৌন্দর্য ধরা দিয়েছে চা বাগানে।
এই সময়ে শ্রমিকের হাতের পরশে কুঁড়ি চয়ন করে ঝুড়ি ভর্তির কথা, সেখানে বাগানগুলোতে চলছে সুনসান নীরবতা। চা চয়নে নেই চা শ্রমিকরা। তারা এখন ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আছেন কর্মবিরতিতে।
শ্রমিকরা বলছেন, আমরা ঝুড়িতে কুঁড়ি ভর্তি করি। তাতে মালিকদের পেটপুরে (লাভ হয়), মোদেরতো পেট ভরে না, বাপু।
চা শ্রমিক রাম ভৌমিক বলেন, সেই ৮১ সাল থেকে চা বাগানে কাজ করি। আগেতো মাইনে কম ছিল। মজুরি ছিল ১ টাকা ৯০ পয়সা। এরপর বেড়ে ৪ টাকা হয়। এই ৪ টাকা মাইনেতেও কাজ করেছি। পরে সাড়ে ৪ টাকা থেকে ৫, ৭ টাকা, এরপর আসলো ১২ টাকায়। এভাবে বাড়তে বাড়তে ১২০ টাকাতে আসে। কিন্তু এই টাকায়তো পোহায় না (পোষায় না)। বয়সের কারণে এখন আর টাকা পাই না। গরু রেখে দিন কাটাই, ভাতিজার ওপর আছি। সে দিলে কিছু খাই। বেশিরভাগ দিন লবণ দিয়েও ভাত খেতে হয়। এখন পেট চালাতে শ্রমিকরা আন্দোলন করছে।
তিনি বলেন, চাল, তেল, পেঁয়াজ, মরিচ সব কিছুরই দাম বাড়ছে। এই ১২০ টাকায় কি পোহায় চা পাতার কুঁড়ি তুলে ঝুড়ি ভরলেও পেটতো ভরে না। অভাবের কারণে চা শ্রমিকরা সন্তানদের পড়ালেখা করাতে পারে না, তাই এখন চুরি চামারি, মদ, গাঞ্জা (গাঁজা) খাওয়া শিখছে।
শ্রমিকদের অনেকে বলেন, ১২০ টাকা মজুরি ‘এ’ ক্যাটাগরির বাগানগুলোতে। বি ও সি ক্যাটাগরির বাগানগুলোতে আরো কম। এই টাকা থেকেও কেটে কুটে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পাওয়া যায়। তাতে সংসার চলে কী করে। এ ক্যাটাগরির বাগানে ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়। ৮ ঘণ্টায় সেটা সম্ভব হয় না। আগে ১৮ কেজি তুললে হতো। এরপর ৫ কেজি কেমনে কি করে বাড়াইছে, তা বলা মুশকিল। তাও এক ঘরে ৫ জন লোক থাকলেও একজনকে বাইরে কাজ দেওয়া হয় না।
সিলেটের লাক্কাতুড়া চা বাগানের শ্রমিক ছন্দা গোয়ালা বলেন, আমার পরিবারে ৫ জন মানুষ। একজনকে কাজ করতে দেওয়া হয়। সে কোনোদিন হাজিরায় কাজের পরিমাণে ১০০ টাকা পায়। কোনো দিন শরীর খারাপ থাকলে কাজে যেতে পারে না। এর বাইরে কোনো সুযোগ সুবিধা মিলে না। আর অভাবের তাড়নায় সন্তানদেরও স্কুলে দিতে পারি না।
চা শ্রমিকের সন্তান দেবাশীষ গোয়ালা বলেন, আমাদের বাবা-মায়েরা না হয় কলম ধরতে পারেন না। কিন্ত আমরা কিছু সন্তানরাতো লেখাপড়া করি। বুঝি। টাকা বাড়াতে গেলে মালিক পক্ষ কেবল লোকসানের কথা বলেন। গত ১৬ থেকে ২২ তারিখে চা বোর্ডের পেইজে ডুকে দেখলাম প্রায় ৮২ শতাংশ রপ্তানি (সেইল) হয়েছে। তারপরও তারা লোকসানের টালবাহানা করে মজুরি বাড়াতে চান না। ১৯ মাস আলোচনায় ১২০ টাকা থেকে ১৪ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। ঢাকায় মিটিংয়ের পর আরো ৬ টাকা বাড়ানো হয়। কিন্তু আমাদের দাবি ৩০০ টাকা করতে হবে।
তিনি বলেন, ২০২০ সালে করোনাকালে মানুষ যখন হোম কোয়ারেন্টিনে। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে গিয়ে চা শ্রমিকরা কাজ করে গেছে। করোনাকালে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু করোনার ক্ষতিপূরণ হিসেবে মালিকদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোটি কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়, তাহলে শ্রমিকরা কি করলো শ্রমিকরা করোনার ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও তাদের প্রণোদনা দেওয়া হলো না। এখন ৩০০ টাকা মজুরি আমাদের যৌক্তিক দাবিটাও তারা মেনে নিচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, চা শ্রমিকদের কর্ম সময় ৮ ঘণ্টা। এই সময়ে ক্ষতি হচ্ছে অন্তত ৩০ কোটি টাকা করে। প্রতিদিন দেশের ১৬৭টি চা বাগানে অন্তত ২০ কোটি টাকা দাবি করেছেন বাগান মালিকরা। সে হিসেবে আন্দোলনের দশম দিন পার করেছে। এই হিসাব অনুযায়ী ১০ দিনে ক্ষতি ২শ’ কোটি।
দেশের এমন বৃহৎ ক্ষতির শঙ্কার পরও চা শ্রমিকদের মজুরি ৩০০ টাকা না করা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
আগামী ২৩ আগস্ট ঢাকায় শ্রম অধিদপ্তরে চা বাগান মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে দাবি-দাওয়া নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়োর কথা রয়েছে।
এদিকে চা শ্রমিকরা মজুরি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ছাড়া কর্মবিরতি প্রত্যাহার না করার বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছেন।