• এপ্রিল ৯, ২০২০
  • মতামত
  • 1058
সামাজিক দূরত্ব, নাকি সামাজিক দায়বদ্ধতা ?

মতামতঃ আগামীর বাংলাদেশ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে, এমন আশংকার কথা বলে চলেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সরকার স্বাস্থ্য বিভাগ বার বার বলছে, ঘরে থাকো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখো,ঘরে স্ত্রী সন্তান মানা করছে ঘর থেক বের হওয়া যাবে না। জন্মের পর থেকে বড় হয়েছি যেটুকুন অর্জন সব কিছুই প্রিয় মানুষ প্রতিবেশী এলাকাবাসীর কারণে। একজন নেতার সহকর্মী হয়ে রাজনৈতিক সামাজিক কর্মকান্ডে বিচরণ করেছি ছাতক দোয়ারা বাজার এলাকার প্রতিটি জনপদে। যাদের ঘিরেই আমাদের রাজনৈতিক সামাজিক বন্ধন, সেই সকল প্রিয় মানুষজন আজ অনেকই কর্মহীন হত-দরিদ্র দিনমজুর খাদ্যাভাবে জীবন সংসার চালাতে তাদের চরম অসহায়ত্ব আমাদের সত্যি ভাবিয়ে তুলেছে। সরকfরী ত্রাণ কি সবাই পাচ্ছে ? কিংবা সরকারী ত্রাণের সঠিক ব্যবহার কি সরকার নিশ্চিত করতে পারবে ? বাস্তবতা তাই বলে না।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মহামারিতে একজন ব্যক্তি বরাবারই তার সামর্থ্য নিয়ে ছুঁটে চলেছেন বঞ্চিত হত-দরিদ্র দিনমজুর মানুষের দরজায়। নিজ হাতে সামান্য খাদ্য সামগ্রী তুলে দিয়েছেন মানুষদের হাতে। তিনি ছাতক দোয়ারাবাজারবাসীর একজন মিজান চৌধুরী। দীর্ঘদিন থেকে আমি তার রাজনৈতিক কর্মী কখনও মানবিক কাজের সহযাত্রী। বর্তমান করোনাভাইরাস সংক্রমণে, কোথাও আক্রান্তে গোটা পৃথিবীর মানুষ স্তব্ধ বাকরুদ্ধ,সবাই আজ গৃহবন্দী । মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সাহস পাচ্ছেনা, মৃত্যু ভয় তাড়া করছে সবাইকে।

এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, নাকি সামাজিক দায়বদ্ধতা। কোন টা বড় ? নিজেকে ঘরে নিরাপদ না রেখে হত-দরিদ্র মানুষকে সহায়তার তাগিদটা বড় হয়েছে বলেই আজ ছাতকের ভাতগাঁও, সিংচাপইড়,জাউয়াবাজার, চরমহল্লা,ছাতক ইউনিয়নের প্রায় ২০০০ হত-দরিদ্র কর্মহীন অসহায় মানুষজনদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করতে পেরে সমাজকর্মী হিসেবে একটু ভালো লেগেছে। মানুষ মানুষের জন্য অন্তত এই উক্তিটি বেঁচে থাকুক এই সমাজে।

সারাদিন অজানা আতঙ্কের মধ্যেও ঘুরেছি গ্রাম থেকে গ্রামাঞ্চলে, দেখেছি মানুষের অসহায়ত্ব কারও চোখে দেখেছি অশ্রুজল,দেখেছি আরও কিছু ত্রাণ পাওয়ার আকুতি।
যথেষ্ট মন খারপ নিয়ে বাসায় ফিরে কলিংবেল চাপতেই আমার ১১বছরের মেয়েটি গেইট খুলে দিল। অন্য সময় হলে মেয়েটি জড়িয়ে ধরত কতো আদর ভালোবাসার স্পর্শ থাকতো,কিন্তু আজ তার চাঁপা ক্ষোভ। ঘরে ঢুকার সাথে সাথেই আমার কলিজার টুকুরো ৬ বছরের ছেলে বলিতেছিল আব্বু আমাকে তুমি ছুঁইবেননা,তুমি সারাদিন বাহিরে ছিলে তোমাকে জড়িয়ে ধরতে আমার ভয় করছে। আমার স্ত্রীর মন বিষম খারাপ আজকে বাংলাদেশে ১১২জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত, নিজে না বাঁচলে কোথায় থাকবে তোমার মানবতা। যাক বিশ্ব পরিস্থিতি যাই থাকুক ঘরের পরিবেশ শান্ত করতে কিছুটা সময় লেগেছে। স্ত্রী সন্তানদের বুঝাতে পেরেছি সামাজিক দূরত্বের চাইতে সামাজিক দায়বদ্ধতা আমার কাছে অনেক অনেক বড়।

দেশ বিদেশে অনেক আত্মীয় প্রিয়জন ভয়াবহ কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন, সামর্থ্যের বিচারে আমি নিজেও মানসিক যন্ত্রণায়। আল্লাহ পাক-রাব্বাল আলামিন আমাকে যদি পর্যাপ্ত সামর্থ্য দান করতেন,এই সময়ে নিজেকে উজাড় করে এলাকাবাসীর মাঝে বিলিয়ে দিতাম।

দোয়া করি প্রিয় নেতা মিজান ভাইকে মহান আল্লাহ যেন তার এই মহতী দানের উত্তম প্রতিদান দিয়ে বার বার মানুষের মূখে হাসি ফোটানোর তওফিক দেন।
এই নিখিল বিশ্বভ্রমান্ডের মালিক বিশ্বের সমস্ত মানুষকে তার অসীম কুদরতি শক্তি দিয়ে যেন হেফাজত করেন।

হে দয়াময় আল্লাহ তুমি অর্ন্তযামি আমাদের ক্ষমা করো,আমাদের নাজাতের উছিলা হিসেবে পবিত্র মক্কা হারামাইন শরীফ,মদিনা মনোওয়ারা সহ বিশ্বের সমস্ত মসজিদ অতি দ্রুত বিশ্ব মুসলমানদের শান্তি কল্যাণের জন্য খোলে দাও। আমিন ইয়ারাব্বাল আলামিন।

লেখক মোঃ নিজাম উদ্দিন,
সাবেক চেয়ারম্যান খুরমা (উত্তর) ইউনিয়ন পরিষদ, ছাতক।
যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি।