• জুন ১, ২০২১
  • শীর্ষ খবর
  • 247
সাংসদ মোকাব্বির ‘জামায়াত-শিবিরের প্রেমে পড়ে সিন্ডিকেট বলছেন’

নিউজ ডেস্কঃ সিলেট-২ আসন (ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ) থেকে নির্বাচিত গণফোরামের সাংসদ মোকাব্বির খান তাঁর নির্বাচনী এলাকা ওসমানীনগর উপজেলায় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। সিন্ডিকেটে কারা—এ বিষয়ে লিখিত বক্তৃতায় সাংসদ উল্লেখ করেননি। এ নিয়ে প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি শুধু বলেছিলেন, ‘এত প্রভাবশালী সিন্ডিকেট, নাম নিতেও ভয় পাচ্ছি।’

সাংসদের এই সংবাদ সম্মেলনের তিন দিনের মাথায় ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা করে উল্টো সাংসদ মোকাব্বিরকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারি টাকা লুটপাটের অভিযোগ তুলেছে। সংবাদ সম্মেলনে ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘এমপি মোকাব্বিরের জামায়াত-শিবির প্রেম এলাকায় বেশ আলোচিত। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর জামায়াত-শিবিরের প্রেমে পড়ে সিন্ডিকেট বলছেন। ওসমানীনগর উপজেলার চিহ্নিত রাজাকারদের উত্তরসূরিদের নিয়ে জোট বেঁধেছেন। সরকারি অর্থ লুটপাট, স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে আঁতাত, জামায়াত-শিবির অনুসারীদের পুনর্বাসন ছাড়াও নানা অনিয়ম করেছেন। এসবের প্রতিবাদ করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা করে বিকেলে ওসমানীনগরের গোয়ারাবাজারে একটি রেস্তোরাঁর সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে লিখিত বক্তব্যে দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী। লিখিত বক্তব্যের কপিতে সাধারণ সম্পাদকসহ উপজেলা কমিটির সভাপতি আতাউর রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে।

সাংসদের সংবাদ সম্মেলনের পর পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করায় সিন্ডিকেটের দায়ভার নেওয়া কি না, জানতে চাইলে আফজালুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (সাংসদ মোকাব্বির) চলমান কিছু উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে নানা অভিযোগ করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দোষারোপ করেছেন। বাংলাদেশে কোনো এমপি ইউএনওর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন, এটা নজিরবিহীন। এসব উন্নয়নবিরোধী তৎপরতা। এ জন্য আমরা পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছি। সিন্ডিকেট বলে সরকারের উন্নয়নকাজকে বাধাগ্রস্ত করেছেন। এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা না চাইলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাংসদ মোকাব্বিরের বিরুদ্ধে নানা বিষোদ্‌গার করা হয়। তাঁর সঙ্গে যাঁরা আছেন, তাঁদেরকে রাজাকারের উত্তরসূরি দাবি করে বলা হয়, এমপি মোকাব্বির হাটে–ঘাটে প্রচার করে চলেছেন, অতীতে তিনি ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ করেছেন। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডে তাঁর নিকটজন রয়েছেন এমন প্রচারণার মাধ্যমে বিভ্রান্ত করছেন প্রশাসনে থাকা লোকজনকে। সরকারি অর্থ লুটসহ নানা অনিয়ম করে যাচ্ছেন বেপরোয়াভাবে। ওসমানীনগর উপজেলার ৮ ইউনিয়নের জন্য আসা এমপি মোকাব্বিরের সরকারি বরাদ্দ নিয়ামনীতির তোয়াক্কা না করে লুটেপুটে খেয়েছেন। জোটবদ্ধ হয়ে এই লুটপাট করেছেন এমপির পিএস কয়েছ মিয়া, বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপির নেতা আবদাল মিয়া ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান এমরান রব্বানী।
গত ২৯ মে সিলেট শহরে সাংসদ মোকাব্বিরের সংবাদ সম্মেলনে আবদাল মিয়া, এমরান রব্বানী ও সাংসদের পিএস কয়েছ মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

ওসমানীনগর উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণে ১০ কোটি টাকা সিন্ডিকেটের হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা সম্পর্কে উল্টো সাংসদ মোকাব্বিরকে দোষারোপ করা হয়। এ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপনে জায়গা নির্ধারণের জন্য পত্র আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন ইউএনও তাহমিনা আক্তার। উপজেলা সদরে টেকনিক্যাল কলেজ হচ্ছে বিষয়টি জানতে পেরে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বড় অঙ্কের টাকা ইনকামের মিশনে নামেন এমপি মোকাব্বিরের ব্যক্তিগত সহকারী কয়েছ মিয়ার যোগসাজশে একটি চক্র। বড় অঙ্কের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপনের জন্য জায়গা খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে একজনের সঙ্গে অদৃশ্য চুক্তি হয়। এই চুক্তি বাস্তবায়নে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরবর্তী স্থানে গোচারণ ভূমিতে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের চেষ্টা চলছে। বিষয়টি তদন্ত করলেই সত্যতা পাওয়া যাবে বলে সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়।