• জুন ২০, ২০২১
  • শীর্ষ খবর
  • 261
সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচন: হাবিবের দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে উত্তপ্ত নির্বাচনী মাঠ

নিউজ ডেস্কঃ হাবিবুর রহমান হাবিব দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে ছিলেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সম্পাদকীয় দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। তবে বেশকিছুদিন ধরেই দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। সিলেট আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবেও আছেন।

এবার সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে নিবকূাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়ন বৈধও ঘোষিত হয়েছে।

তবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে হাবিবের বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ ওঠে। হাবিব এখনও যুক্তরাজ্যের নাগরিক বলে অভিযোগ করেন তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা। যদিও হাবিবের পক্ষ থেকে প্রথম থেকেই তা অস্বীকার করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সংবিধানের ৬৬ নম্বর অনুচ্ছেদের ২ ধারায় উল্লেখ আছে- কোন ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ-সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি তিনি কোন বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোন বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন।

তবে হাবিবের দাবি, তিনি যুক্তরাজ্যের নাগরিত্ব অর্জন করলেও আইন মেনে ৬ মাস আগেই তা ত্যাগ করেছেন।

এদিকে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরই এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া্ ফাহমিদা হোসেন রুমা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ, হাবিবুর রহমান হাবিব দ্বৈত নাগরিক।

এমন অভিযোগ সত্ত্বেও যাছাই-বাছাই শেষে হাবিবের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন করেন।

তবে এতে সন্তুষ্ট না হয়ে হাবিবুর রহমান হাবিবের প্রার্থীতা চ্যালেঞ্জ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরবারে আপিল করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক।

রবিবার (২০ জুন) দুপুরের পরে আতিকের আইনজীবী প্যানেলের কয়েকজন সদস্য ঢাকাস্থ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে আপিলের কাগজ দাখিল করেন।

হাবিবের দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে তার সাংসদ প্রার্থী হওয়া বৈধ নয়- এ বিষয়টি তুলে ধরে আপিল করেন জাপা নেতা আতিক।

এ প্রসঙ্গে আতিকুর রহমান আতিক বলেন, আমার আইনজীবী প্যানেলের কয়েকজন সদস্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে আপিলের কাগজপত্র দাখিল করেছেন।

তিনি বলেন, হাবিবের প্রার্থীতা কোনোভাবেই বৈধ হতে পারে না। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী- যদি কারো দ্বৈত নাগরিত্ব থাকে এবং এ দেশে তিনি সাংসদ প্রার্থী হতে চান তবে ৬ মাস আগে সে দেশের বাংলাদেশি দূতাবাসে সেই নাগরিকত্ব বাতিলের আবেদন করে সারেন্ডার করতে হবে। তখন দূতাবাস থেকে একটি কাগজ দেয়া হবে। সেই ডকুমেন্ট প্রার্থী নির্বচনী হলফনামার সঙ্গে সংযুক্ত করে দিবেন। কিন্তু হাবিবুর রহমান হাবিবের দ্বৈত নাগরিত্বের বিষয়টিই হলফনামার কোথাও উল্লেখ করেননি।

আতিকের পক্ষে আপিল করা এক আইনজীবী বলেন, ‘মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মারা গেছেন মাত্র ৩ মাস আগে। কিন্তু সারেন্ডার করতে হয় ৬ মাস আগে। হাবিব কি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুর আগেই সারেন্ডার করেছিলেন? তিনি কী করে জানতেন এই এমপি মারা যাবেন? এটা কীভাবে সম্ভব? আর যদি করেই থাকেন তবে তো তার যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। তিনি কি সে দেশের সব আসয়-বিষয় গুটিয়ে নিয়েছেন? সে খবরতো আমরা কেউ জানি না।’

এই আপিলের শুনানির সম্ভাব্য তারিখ ২২ জুন বলে জানান ওই আইনজীবী।

তবে এমন অভিযোগকে হয়রানিমূলক দাবি করে হাবিবুর রহমান হাবিব রোববার দুপুরে বলেন, আমাকে হয়রানি করা ও তারা নিজেরা প্রচার পাওয়ার জন্যই এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।

তিনি বলেন, আমি ৬ মাস আগেই যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব প্রত্যাহার করেছি। ফলে এখন আমি শুধু বাংলাদেশের নাগরিক। নির্বাচনে প্রার্থী হতে আমার কোনো আইনী বাধা নেই।

এ প্রসঙ্গে সিলেটের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদেরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে যেহেতু আপিল করা হয়েছে তাই এখন আমি কোনো মন্তব্য করবো না।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১১ মার্চ মারা যান সিলেট-৩ আসনের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ২৮ জুলাই এ আসনে উপনির্বাচন হওয়ার কথা।

উপ নির্বাচনে ৬ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে ৪ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তারা হলেন- এই ৬ জনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত হাবিবুর রহমান হাবিব, জাতীয় পার্টি মনোনীত আতিকুর রহমান আতিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বিএনপি নেতা শফি আহমদ চোধুরী ও জাহেদুর রহমান মাসুম।