• সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১
  • জাতীয়
  • 687
দুর্নীতির কারণে টিকা সংগ্রহে ব্যর্থ সরকার: মির্জা ফখরুল

নিউজ ডেস্কঃ সরকার দুর্নীতির কারণে টিকা সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে সম্পূর্ণভাবে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। আজকে আমাদের অধিকারগুলো কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির একাংশের প্রয়াত চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পৃথিবীর রাজনীতি, শাসকগোষ্ঠী ও শোষিতেরগোষ্ঠী পাল্টাচ্ছে। আগে শ্রমিক রাজ কায়েমের কথা বলা হতো। এখন আর সেটা বলা হয় না। এখন বলে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের কথা। মানুষের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। এ হতাশার কোনো কারণ নেই। কারণ জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে, কল্যাণের বিরুদ্ধে গিয়ে, মানুষের আশা-আকাঙ্খা চূরমার করে দিয়ে কেউ কোনো দিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কেন জিয়াউর রহমানের কবর নিয়ে কথা বলছে, মুক্তিযুদ্ধে যোগদান নিয়ে কথা বলছে। কারণ তাদের আর কিছু নেই। রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। সেজন্যই তারা এ সব ইস্যু নিয়ে আসছে। অথচ ইস্যু হচ্ছে টিকা। মানুষকে বাঁচাতে হলে টিকা দরকার। এ পর্যন্ত চার শতাংশ মানুষকেও টিকা দিতে পারেনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে জ্যোতিষবিদ করলে ভালো হতো। তিনি প্রতিদিন বলছেন এ আসছে পাঁচ লাখ টিকা, ১০ লাখ টিকা ডিসেম্বরে আসবে। এসব তিনি জ্যোতিষির মতো কথা বলছেন। প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে টিকা নেই। তারা টিকা সংগ্রহে দুর্নীতির কারণে ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের মাথায় সবসময় থাকে কোনটাতে কমিশন পাবো, কোনটাতে বেশি পাবো। এর ফলে হয়েছে চীন, রাশিয়া আসলো তখন তারা বিদায় করে দিয়েছে। পরে ভারতের সঙ্গে তিন কোটি টিকার জন্য অগ্রিম পেমেন্ট করেছে। কিন্তু ৭০ লাখের বেশি টিকা পেলো না। কেন একজন ব্যক্তিকে দুর্নীতিতে সাহায্য করার জন্য এ কাজটা করা হলো।

তিনি বলেন, দুর্নীতি থেকে মানুষের দৃষ্টি সরাতে এসব ইস্যু তৈরি করে। গণতন্ত্র হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না। আমার মনে হয় আওয়ামী লীগ কোনো দিন গণতন্ত্র বিশ্বাস করেনি বলে আজকে দেশের এ অবস্থা। তারা জনগণের আশা-আকাঙ্খা ধ্বংস করেছে।

তিনি আরও বলেন, মানুষের দৃষ্টিকে সবসময় অন্যদিকে নিতে চায়। আসল বিষয় থেকে। যেটা ইস্যু না, যেমন পরীমনিকে নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। ফলে বিষয়টা এমন একটা অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে দেশকে সম্পূর্ণভাবে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। আজকে আমাদের অধিকারগুলো কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ যতদিন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে তত জাতি বিপন্ন থাকবে।

আজকের এ সংকট সমগ্র জাতির উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এ সংকটের ফলে জাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে সে সংকট আরও বিপন্ন হবে। আওয়ামী লীগ আমাদের সব কিছুকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে ১০ বছর হয়েছে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। অথচ একটা রোহিঙ্গাও ফেরত পাঠাতে পারলো না সরকার। কারণ তাদের নতজানু কূটনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি। যে দুইটি দেশ মূল ভূমিকা পালন করে চীন ও ভারত। তাদের কাছে কথা বলার সাহস নেই সরকারের।
কেউ এসে আমাদের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষা করে দিয়ে যাবে না। আমরা কোন জায়গায় পৌঁছেছি যে গণতন্ত্রের জন্য আপসহীন সংগ্রাম করলেন তিনি গৃহে অন্তহীন হয়ে আছেন। এখন পর্যন্ত তাকে মুক্ত করতে পারিনি। এটা নিঃসন্দেহে আমাদের দেশের মানুষের ব্যর্থতা এটা স্বীকার করতে কোনো আপত্তি নেই।

মুক্ত করতে পারিনি কেন? প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে যে ভয়ানক দানবটি বসে আছে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে বিরোধী শক্তিগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন প্রয়োজন ইস্পাত কঠিন রাজনৈতিক শক্তির। দেশকে বাঁচানোর জন্য তরুণ-যুবকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যাতে সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রমূলক সংসদীয় সরকার গঠন করতে পারি। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমেদকে স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কাজী জাফর নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনীতির উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি সারা জীবন রাজনীতি করে গেছেন। তিনি স্থির থাকেনি তবে লক্ষ্য ছিল একটা কীভাবে জনগণের কল্যাণ করা যায়। একই সঙ্গে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। জাফর ভাইয়ের স্মৃতি অম্লান থাককু, তার বেহেশত কামনা করছি।