• অক্টোবর ১৪, ২০২১
  • শীর্ষ খবর
  • 314
নৌকার প্রার্থী সেই ইমাদ দীর্ঘদিন ছিলেন শিবির নেতা, মিললো বিস্তর প্রমাণ

নিউজ ডেস্কঃ আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে গত রবিবার (১০ অক্টোবর) দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে আওয়ামী লীগ।

প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পরপরই সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী নিয়ে সিলেটজুড়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। এ ইউনিয়নে কোম্পানীগঞ্জ থানা ছাত্র শিবিরের সাবেক তুখোড় নেতা ইকবাল হোসেন ইমাদকে নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। এ ক্ষেত্রে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে ইকবাল ‘ম্যানেজ’ করে নৌকা প্রতীক বাগিয়ে নেন বলে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ অভিযোগ তুলেন।

আজ (বৃহস্পতিবার) এ অভিযোগের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তর প্রমাণ উপস্থাপন করলেন দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতৃবৃন্দ।

বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুল ইসলাম। এসময় তাঁর পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পড়ে শুনান আওয়ামী লীগ নেতা নূর মুস্তাকিম।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কোম্পানীগঞ্জের দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একসময়ের তুখোড় ছাত্রশিবির নেতা ও আওয়ামী লীগ, শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনাবিরোধী ইকবাল হোসেন ইমাদকে নৌকার প্রার্থী করায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী প্রচন্ডভাবে হতাশ ও ব্যথিত।

ইকবাল হোসেন ইমাদের জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের খাগাইল গ্রামের মো. আব্দুস সালামের ছেলে ইমাদ ২০০৩ সালে দলইরগাও স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে এম. সাইফুর রহমান কলেজে ভর্তি হন। সেখানে ২০০৪ সাল থেকে তিনি ইসলামি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যান। পরবর্তীতে ২০০৬ সালের আংশিক এবং ২০০৭ সালের পুরো সময় তিনি কোম্পানীগঞ্জ থানাশিবিরের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। বিষয়টি শিবিরের ২০০৯ ও ২০১০ সালের সাংগঠনিক ডায়েরিতে লিখিত রয়েছে। ইমাদ ২০১০ সালের মার্চে যুক্তরাজ্য যাওয়ার আগ পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে প্রকাশ্যে এবং সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। এই সময়কালে তিনি নিজের হাতে বেশ কয়েকজন শিবিরকর্মী গড়ে তুলেন। তারা বর্তমানে জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন পদে দায়িত্বশলী।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় ইকবাল হোসেন ইমাদ তার ব্যবহৃত Ikbal H. Imad নামক আইডি থেকে নিয়মিত বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে কটূক্তিমূলক নানা পোস্ট করতেন। এছাড়াও জামায়াত-শিবির ও ওই দলের নেতৃবৃন্দের গুণগান গেয়ে বহু পোস্ট করেন। এই আইডিটি তিনি ২০২১ সালের ২ অক্টোবর পর্যন্ত অ্যাক্টিভ রাখেন। বর্তমানে ইমাদের Ikbal H. Imad নামে তার আরেকটি ফেসবুক আইডি রয়েছে, কিন্তু সেটি নতুন। আওয়ামীবিরোধী পোস্ট দেওয়া সেই আইডি তিনি ডিঅ্যাক্টিভ করে দিয়েছেন।

এদিকে, ২০১৬ সালের শেষের দিকে ইকবাল হোসেন ইমাদ দেশে ফিরে জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং স্বাধীনতাবিরোধী এ দলের অর্থতহবিলে অনেক টাকা-পয়সাও দান করেছেন। এছাড়াও জামায়াত-শিবিরের দলীয় অর্থতহবিল থেকে বড় অংকের টাকা নিয়ে তিনি নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আব্দুস সালাম অটো ব্রিক্সে বিনিয়োগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৮ সালের শেষ দিকে নিজের খোলস পাল্টে ইমাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাসিমকে ম্যানেজ করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে যোগদান করেন ও ২০১৯ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য হন। সর্বশেষ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিকে ম্যানেজ করে দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা চান এবং চরম আওয়ামবিদ্বেষী ও স্বাধীনতাবিরোধী রাজনীতির একসময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা ইমাদ নৌকা প্রতীক বাগিয়ে নেন।

নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর তৃণমূল আওয়ামী লীগে যখন নিন্দা ও সমালোচনা ঝড় ওঠে তখন তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন করে ইকবাল হোসেন ইমাদ বেশ কিছু মিথ্যা তথ্য সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করে তিনি বলেন, যে শিবির নেতা ইকবাল হোসেনের কথা বলা হচ্ছে সেই ব্যক্তি তিনি নন। কিন্তু কথাটি চরম মিথ্যাচার। তিনি যে ব্যক্তির কথা বলছেন তার নাম ইকবাল হোসেন। ওই ইকবাল দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের পশ্চিম বর্ণী গ্রামের মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুন নুরের ছেলে। কিন্তু চেয়ারম্যান প্রার্থী ইকবাল হোসেন ইমাদ দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের খাগাইল গ্রামের মো. আব্দুস সালামের ছেলে।

এর প্রমাণ হিসেবে দুজনের এসএসসি সার্টিফিকেট সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।

এই অবস্থায় স্বার্থের প্রয়োজনে খোলস পাল্টানো ইকবাল হোসেন ইমাদের কবল থেকে আওয়ামী লীগ ও দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নকে রক্ষা করতে এবং এ ইউনিয়নে পুনরায় প্রার্থী নির্ধারণ করতে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের প্রতি অনুরোধ জানান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।