• মার্চ ২৫, ২০২২
  • শীর্ষ খবর
  • 186
হবিগঞ্জে ঐতিহ্যের স্মারক শংকরপাশা শাহি মসজিদ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ চুন-সুরকি আর লাল ইট দিয়ে তৈরি ৬০০ বছরের পুরোনো হবিগঞ্জের উচাইল শংকরপাশা শাহি মসজিদটি মহাকালের গতিপ্রবাহের চিহ্ন নিয়ে এখনো টিকে আছে। মসজিদের নকশা ও ইটের বৈচিত্র্যময় গাঁথুনি দৃষ্টি কাড়ে সবার। পুরো স্থাপত্যটি নান্দনিক হয়ে উঠেছে সব শ্রেণির মানুষের কাছে।

হবিগঞ্জ সদর থেকে উচাইল শংকরপাশা জামে মসজিদের দূরত্ব প্রায় ১১ কিলোমিটার। সদর উপজেলার রাজিউড়া ইউনিয়নের উচাইল গ্রামে এর অবস্থান। এটি এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ। সুলতানি আমলের বর্গাকার এ মসজিদের দেয়ালের দৈর্ঘ্য ২১ ফুট ৫ ইঞ্চি। এর সম্মুখভাগে রয়েছে পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি প্রশস্ত বারান্দা। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের রাজত্বকালে সম্ভবত ১৪৯৪ থেকে ১৪৯৯ খ্রিষ্টাব্দের কোনো একসময় মসজিদটি নির্মিত হয়। (সূত্র: হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পাহাড়-ঢিলা-হাওর–বন পর্যটনবিষয়ক প্রকাশনা)।

মসজিদের চার কোণে রয়েছে চারটি অষ্টভুজাকৃতির সন্নিহিত বরুজ। এর উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দেয়ালেও একই রকম বরুজ রয়েছে। মসজিদের পূর্ব দিকের সদরে রয়েছে খাঁজ-খিলানশোভিত তিনটি প্রবেশপথ। মধ্যবর্তী প্রবেশপথটি অপর দুটি প্রবেশপথ থেকে প্রশস্ততর ও উঁচু। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে রয়েছে বারান্দা। পূর্ব দিকের সদরের বহির্ভাগে দেয়ালের উভয় প্রান্তে ওপর থেকে পরপর সন্নিবেশিত হয়েছে তিনটি প্যানেল এবং প্রবেশপথের উপরিভাগে রয়েছে এ প্যানেলের সঙ্গে সমান্তরাল সন্নিবেশিত দুটি প্যানেল। তিনটি প্রবেশপথের মধ্যবর্তী অবস্থানে দুটি খর্বাকৃতি প্যানেলের উপরিভাগে রয়েছে পরস্পর সমান্তরাল একটি বড় আকারের প্যানেল। শিকলাকৃতির তরুশাখা থেকে ঝুলন্ত লতাপাতার নকশার মাধ্যমে শিকল ও ঘণ্টার মোটিফ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। খিলানের পাশে ত্রিকোণাকার পরিসরে পরস্পর সম্পৃক্ত শাখা–প্রশাখার শীর্ষে গোলাপের নকশাসহ প্রদর্শিত হয়েছে বৃক্ষের মোটিফ।

মসজিদের অভ্যন্তরে মিহরাবটি সুদৃশ্য ও অপরূপ নকশাশোভিত। মিহরাবের পার্শ্বদেশের আয়তাকার ফ্রেমে পরস্পরছেদী তরঙ্গায়িত রেখায় অঙ্কিত ছোট ছোট আয়তক্ষেত্রে অভ্যন্তরভাগে চিত্রিত হয়েছে চার বা আট পাপড়িবিশিষ্ট ফুলেল নকশা। কুলঙ্গির খাঁজকাটা খিলান ইটের তৈরি স্তম্ভ শীর্ষে স্থাপিত। এ স্তম্ভগুলো খাড়াভাবে বিন্যস্ত সারবদ্ধ নকশাশোভিত। এ নকশায় পর্যায়ক্রমে সন্নিবেশিত হয়েছে উৎকীর্ণ গোলাপ এবং ফ্রেমবদ্ধ চার পাপড়িবিশিষ্ট পুষ্পের নকশা।

এ মসজিদের অনুসৃত স্থাপত্যশৈলী একদিকে যেমন সমকালীন গৌড়ীয় স্থাপত্যরীতি থেকে ভিন্নতর, অন্যদিকে হোসেনশাহি যুগের ইমারত অলংকরণরীতিরও একটি ব্যতিক্রম।

মসজিদের চারপাশ সবুজ গাছগাছালিতে ঢাকা। পাশাপাশি খেজুরগাছের সারিতে ঘেরা চত্বরটি পুরো মসজিদের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

শংকরপাশা গ্রামের বাসিন্দা এনায়েত হোসেন বলেন, ‘এ মসজিদের কারণে আমাদের গ্রামের আলাদা পরিচিতি তৈরি হয়েছে। দেশ-বিদেশের নানা জায়গা থেকে মানুষ আসেন মসজিদটি দেখতে। আমরা নতুন প্রজন্মের জন্য এর ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাই।’

হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ও মসজিদ এলাকার বাসিন্দা শামীম আহমেদ বলেন, এ মসজিদ রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এটি যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিন দিন এর সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। মসজিদটিকে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নেওয়া জরুরি।