• মার্চ ২৭, ২০২২
  • আন্তর্জাতিক
  • 263
শ্রীলঙ্কায় চালের কেজি ৩৩০, চায়ের কাপ ১১৫ টাকা

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ শ্রীলঙ্কায় এক কেজি চাল কিনতে গুনতে হচ্ছে ১১০৬ রুপি, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩৩০ টাকা। চিনির কেজির দামও একই। ৪০০ গ্রামের এক প্যাকেট গুঁড়া দুধের দাম ৩ হাজার শ্রীলঙ্কান রুপি বা প্রায় ৯০০ টাকা।

দেশ স্বাধীনের পর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে ধুঁকছে শ্রীলঙ্কা। নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে দিশেহারা মানুষ। কাগজের সংকটে বন্ধ হচ্ছে সংবাদপত্রের প্রকাশনা, বাতিল হয়েছে স্কুলের পরীক্ষা। ভয়াবহ মন্দায় প্রাণ বাঁচাতে সাগর পাড়ি দিয়ে ভারতের তালিম নাড়ুতে আশ্রয় নিচ্ছেন অনেকে।

ব্রিটেনের কাছ থেকে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর এত বড় অর্থনৈতিক সংকট দেখেনি শ্রীলঙ্কা। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে পৌঁছানোয় খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির সরকার।

শ্রীলঙ্কাজুড়ে নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে বিপর্যন্ত জনজীবন। জ্বালানির তীব্র সংকট আরও খারাপ করেছে পরিস্থিতি।

এক কেজি চাল কিনতে গুনতে হচ্ছে ১১০৬ শ্রীলঙ্কান রুপি, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩৩০ টাকা। চিনির কেজির দামও একই। ৪০০ গ্রামের এক প্যাকেট গুঁড়া দুধের দাম ৩ হাজার শ্রীলঙ্কান রুপি বা প্রায় ৯০০ টাকা।

দুধ ও চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় এক কাপ চা ৩৮০ রুপি বা প্রায় ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে রেস্তোরাঁয়।

ছাপা কাগজের সংকটের কারণে শ্রীলঙ্কার স্কুলে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন স্কুলে ২১ মার্চ টার্ম পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে এর দুদিন আগে কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানায়।

শ্রীলঙ্কায় কাগজ মূলত আমদানি করা হয়। আমদানি করা হয় কালিও। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, পরীক্ষা নিতে কাগজের জোগান দেয়ার মতো ক্ষমতা নেই শ্রীলঙ্কার শিক্ষা দপ্তরের। এমনকি কাগজের আমদানি করতেও পারছে না তারা।

অন্যদিকে নিউজপ্রিন্ট সংকটের প্রভাব পড়েছে শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যমে। দেশটির প্রধান ইংরেজি দৈনিক দ্য আইল্যান্ড এবং এর সিংহলি সংস্করণ দিভায়না শনিবার তাদের ছাপা সংস্করণ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়।

দেশজুড়ে তীব্র জ্বালানিসংকট

অর্থের বিনিময়েও জ্বালানি কিনতে বেগ পেতে হচ্ছে শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের। জ্বালানির জন্য দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষার সময় মারা গেছেন দুজন।

বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোর পুলিশের মুখপাত্র নলিন থালডুয়া বলেন, ‘দেশের দুটি ভিন্ন অঞ্চলে পেট্রল ও কেরোসিন তেলের জন্য অপেক্ষা করার সময় রোববার দুইজনের মৃত্যু হয়। তাদের বয়স সত্তর বছরের বেশি।’

অন্যদিকে, থার্মাল জেনারেটরের তেলের ঘাটতিতে এলাকাভিত্তিক সংকোচনমূলক বিদ্যুৎ সরবরাহের কৌশল নিয়েছে সরকার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কাকে আরও বেশি সংকটে ফেলেছে। সম্প্রতি দেশটিতে জ্বালানির দাম কয়েক দফায় লিটারে বেড়েছে ২০ শতাংশ।

খুচরা জ্বালানি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান লঙ্কা আইওসি দেশটির বাজারের এক-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করে। শনিবার তারা জানায়, পেট্রলের দাম ২৫৪ রুপি থেকে বেড়ে ৩০৩ রুপি (৯০ টাকা) হয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে প্রতিষ্ঠানটি পেট্রলের দাম ২৫ শতাংশ বাড়িয়েছিল।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, চলতি মাসে আমেরিকার ডলারসহ বাণিজ্যে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রার বিপরীতে শ্রীলঙ্কান রুপির মূল্য ৩০ শতাংশ কমেছে। আর এ কারণেই বেড়েছে দাম।

শ্রীলঙ্কায় গত ১৫ মার্চ ডলারের বিপরীতে রেকর্ড দরপতন হয়ে রুপির মান ২৭৫-এ নেমে যায়।

তবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সিলন পেট্রোলিয়াম করপোরেশন তাৎক্ষণিকভাবে জ্বালানির দাম বাড়ায়নি। সিলন পেট্রোলিয়ামের কর্মীরা অবশ্য জানিয়েছেন শিগগিরই তারা লঙ্কা আইওসির পথ ধরবেন।

ভারতে বাড়ছে শরণার্থী

অর্থনৈতিক দুর্দশার চাপ সামলাতে না পেরে অনেকে নৌপথে ভারতে পাড়ি জমাচ্ছেন। ভারতের রামেশ্বরমে নামিয়ে দেয়ার বিনিময়ে প্রায় ২ লাখ শ্রীলঙ্কান রুপি দিতে হচ্ছে ভারতীয় মাঝিকে।

এ ধরনের এক আশ্রয়প্রার্থীকে উদ্ধার করেছে ভারতীয় কোস্টগার্ড। ইন্দো এশিয়ান নিউজের হিসাবে আরও অন্তত ১০ শ্রীলঙ্কান নাগরিক তামিল নাড়ুতে ঢুকেছেন।

শ্রীলঙ্কায় ১৯৮০-এর দশকের গোড়ায় শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের সময় অন্তত ৬০ হাজার শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নেন। তারা আর ফেরত যাননি। ভারত সরকারের হিসাবে তামিল নাড়ুর ১০৭টি আশ্রয় শিবিরে তারা বাস করছেন। এ ছাড়া শিবিরের বাইরে আরও অন্তত ৩০ হাজার শ্রীলঙ্কান শরণার্থী আছেন।

যে কারণে সংকট

করোনা মহামারি শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে ধসিয়ে দিয়েছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসেকে দুষছেন অনেকে। কারণ প্রতিবেশী ভারত এবং বাংলাদেশ এই পরিস্থিতি দারুণ দক্ষতায় মোকাবিলা করেছে।

মহামারি শুরুর পর শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির অন্যতম উৎস রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে যায়। আরেক গুরুত্বপূর্ণ খাত পর্যটনশিল্প ভেঙে পড়ে। এই দুই খাত থেকে বিপুল ডলার আয় করে সরকার।

বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির কারণে ২০২০ সালের মার্চে আমদানিতে বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয় রাজাপাকসে সরকার। এরপরও বিপদ এড়ানো যায়নি। গত মাসে খাদ্যের দাম পাঁচ ধাপে ২৫ শতাংশ বেড়েছে; সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি ১৭.৫ শতাংশ।

প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার বর্তমান সরকারের সম্পর্ক উষ্ণ। উদ্ভুত পরিস্থিতে শ্রীলঙ্কা সফরে যাচ্ছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেখানে সংকট নিরসনে আলোচনার পাশাপাশি দেশ দুটির মধ্যে কিছু চুক্তি হতে পারে।

শ্রীলঙ্কা চলতি মাসের শুরুতে ঘোষণা দেয়, তারা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বেলআউট চাইবে। এ ব্যাপারে ওয়াশিংটনে আলোচনা হতে পারে এপ্রিলে।