• এপ্রিল ২৩, ২০২২
  • শীর্ষ খবর
  • 221
এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার শাহজালাল উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে মন্ত্রণালয় নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া নবম ও দশম শ্রেণির বেতন ও সেশন ফি গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, এমনিতেই নিয়মবহির্ভূতভাবে ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন প্রধান শিক্ষক। তার ওপর নেয়া হচ্ছে ২৪ মাসেরও বেশি বেতনের টাকা।

এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হলেও শিক্ষার্থীদের দেয়া হচ্ছে না রসিদ। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, শাহজালাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাহির আলী তালুকদার স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়ম, দুর্নীতিতে জড়ান। ফলে তাকে শাহজালাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এরই মধ্যে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছিল। সম্প্রতি তিনি আবারও স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পান।

২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ফি নির্ধারণ করেছে ১ হাজার ৬১৫ টাকা। ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের ১ হাজার ৪৯৫ টাকা। অথচ প্রধান শিক্ষক তাহির আলী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করছেন ইচ্ছেমতো টাকা।

তিনি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিচ্ছেন ২ হাজার ৫০০ টাকা। ব্যবসা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা, যা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ফির প্রায় দ্বিগুণ।

বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের এসএসসি পরীক্ষার্থী নাইমা আক্তার তৃষা বলে, ‘অন্য স্কুলগুলোয় এসএসসির ফরম পূরণে সরকারের বেঁধে দেয়া ফি নেয়া হচ্ছে। অথচ আমাদের স্কুলে নেয়া হচ্ছে আড়াই হাজার টাকা। এর কমে ফরম পূরণ করতে দিচ্ছেন না প্রধান শিক্ষক তাহির আলী তালুকদার স্যার। আমাদের ফরম পূরণের রসিদও দেয়া হচ্ছে না।’

বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম বলে, ‘আমি জানি সরকার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ফরম পূরণের ফি ১ হাজার ৬১৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমি ২ হাজার টাকা নিয়ে স্কুলে আসছি। এসে দেখি ফরম পূরণ করতে আড়াই হাজার টাকা লাগে। তাই আমি এখনও ফরম পূরণ করতে পারি নাই।’

মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী আনোয়ার ইসলাম রাহান বলে, ‘শুধু এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণেই অতিরিক্ত টাকা নেননি। একই সঙ্গে চলতি বছরের সেশনসহ অনেক ফিও দিতে হচ্ছে। একসঙ্গে এত টাকা জোগাড় করতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে।’

ইউপি সদস্য সাহেব আলী বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই স্কুল কর্তৃপক্ষের। তবুও প্রধান শিক্ষক তাহির আলী তালুকদার নিজ ক্ষমতাবলে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। অতিরিক্ত টাকা না দিলে কারও ফরম পূরণ করা হবে না বলেও তিনি ছাত্রছাত্রীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

‘ফলে ফরম পূরণ করতে না পারায় বেকায়দায় পড়েছে অনেক শিক্ষার্থী। অনেকে শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা ছাগল-মুরগি বিক্রি করে তাদের সন্তানদের ফরম পূরণ করাচ্ছেন।’

এসব অভিযোগ প্রথমে অস্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক তাহির আলী তালুকদার। পরে অতিরিক্ত ফি নেয়ার তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করলে তিনি বলেন, ‘দেখেন আমাদের স্কুলে মুজিব কর্নার নেই, কোনো ভালো আবাসন ব্যবস্থা নেই। তাই ফরম পূরণের সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সামান্য কিছু টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে।’

রসিদ দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ফরম পূরণকালে শিক্ষার্থীদের কোনো রসিদ দিইনি এটা সত্য। তবে এখন থেকে সবাইকে রসিদ দেয়া হবে।’

হবিগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিধান নেই। যদি কোনো শিক্ষক এমনটা করে থাকেন, তাহলে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’