• এপ্রিল ২৫, ২০২২
  • লিড নিউস
  • 272
সিলেটের জমেছে ঈদের বেচাকেনা, দাম বেশি চাওয়ার অভিযোগ

নিউজ ডেস্কঃ ঈদ, পূজা কিংবা পয়লা বৈশাখ—যেকোনো উৎসবের আগেই কেনাকাটার জন্য সিলেট নগরবাসী বন্দরবাজারের হাসান মার্কেটে ভিড় জমান। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর ঈদের আগে দোকানপাট খোলার ব্যাপারে বিধিনিষেধ ছিল। তবে এবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় বেচাকেনা ভালো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

হাসান মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, দুই বছরের বিরতির পর এবার ক্রেতাদের চাপ বাড়বে বলে আগে থেকেই ধারণা করেছিলেন তাঁরা। তাই অন্যান্য বছরের তুলনায় ঈদকে কেন্দ্র করে এবার ব্যবসায়ীরা দুই থেকে তিন গুণ মাল এনেছিলেন। ক্রেতাদের সাড়াও ভালো পাচ্ছেন বলে ব্যবসায়ীরা খুশি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেট নগরের প্রায় সব শ্রেণির ক্রেতাদের ভিড় রয়েছে। তবে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের উপস্থিতি বেশি ছিল। আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দারাও ঈদ ও অন্যান্য উৎসবের আগে এ মার্কেট থেকেই কেনাকাটা সারেন।

হাসান মার্কেটের ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেছে, সিলেট নগরের কেন্দ্রস্থলে ওই মার্কেটের স্থানে আগে পার্ক ছিল। পার্কটি গোবিন্দচরণ পার্ক হিসেবেই পরিচিতি ছিল। তবে পশ্চিম পাকিস্তানের আলী হাসান নামের এক ব্যক্তি ১৯৫৮ সালে সিলেট জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পাওয়ার পর পার্কের স্থানে মার্কেট নির্মাণ করেন। নিজের নামেই সেই মার্কেটের নাম দেন। এর আগে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলন শুরুর দিকে ১৯৪৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট ও ১১ মার্চ সারা দেশে ধর্মঘটের ডাক আসে। এ কর্মসূচির মধ্যে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ৮ মার্চ তমদ্দুন মজলিস ও মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের উদ্যোগে গোবিন্দচরণ পার্কে জনসভার আহ্বান করা হয়েছিল। সেই সভায় হামলা চালায় মুসলিম লীগের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে ১০ মার্চ প্রতিবাদ সভার আহ্বান করা হয়।

ওই সময় উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে দুই মাসের জন্য সিলেটে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল প্রশাসন। মূলত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি মুছে দিতেই হাসান আলী চতুরতার সঙ্গে ওই স্থানে মার্কেট গড়ে তুলেছিলেন বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এবার ঈদে ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে বেশির ভাগ দোকানে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে দিয়ে হেঁটে গেলেই বিক্রয় প্রতিনিধিরা হাঁক ছেড়ে ডাকছেন, ‘ভাই আইউক্কা, ভালা লাগলে নিবা…।’ মার্কেটে বেশির ভাগ দোকানেই পোশাক পাওয়া যায়। এ ছাড়া সুতা থেকে শুরু করে ব্যাগ, প্রসাধনী, গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যই এ মার্কেটে পাওয়া যায়।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কামাল বাজার এলাকার বাসিন্দা রাসেল মিয়া বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনাকাটা করতে এসেছি। ছেলেমেয়েদের জন্য কাপড়, স্ত্রীর জন্য শাড়ি কিনেছি। এর বাইরে নিজের জন্য দুটি লুঙ্গি কিনেছি।’ প্রতিবছর এ মার্কেট থেকে কেনাকাটা করেন রাসেল মিয়া। তবে এ বছর অন্যান্য সময়ের তুলনায় বিক্রেতারা দাম কিছুটা বাড়তি চাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

হাসান মার্কেটের ব্যবসায়ী রিন্টু চক্রবর্তী বলেন, ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই এখানে সব পণ্য পাওয়া যায় বলে প্রচুর মানুষ মার্কেটে আসছেন। তবে ক্রেতাদের বেশি দাম নেওয়ার অভিযোগটি সঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন। রিন্টু চক্রবর্তী বলেন, দুই বছর ধরে ক্রেতারা ঈদের কেনাকাটা না করায় পোশাকের দাম তাঁদের কাছে বেশি মনে হচ্ছে। বর্তমান বাজারের তুলনায় দাম স্বাভাবিক রয়েছে।