• এপ্রিল ২৯, ২০২২
  • আন্তর্জাতিক
  • 285
কলকাতায় আটকা ১৫ বাংলাদেশি নাবিক, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার আকুতি

নিউজ ডেস্কঃ এক মাস আগে ভারতের কলকাতার নেতাজী সুবাস চন্দ্র ডকে (পণ্য খালাস স্থান) জাহাজে পণ্য বোঝাইয়ের সময় উল্টে ডুবে যায় বাংলাদেশি একটি জাহাজ। এ সময় কোনোমতে প্রাণ বাঁচান বাংলাদেশি ১৫ নাবিক। সেই থেকে কলকাতায় আটকা পড়ে আছেন তাঁরা। এক ভিডিও বার্তায় বন্দীদশা থেকে মুক্তির আকুতি জানিয়েছেন নাবিকেরা। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তাঁরা।

বন্দর কর্তৃপক্ষ নাবিকদের বর্তমানে কলকাতা মেরিন ক্লাব হোটেলে (সি ম্যান হোস্টেল) রাখে। সেখানে বর্তমানে তাঁরা অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন। বাংলাদেশ সরকার বা ভারত কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁদেরকে দেশে ফেরাতে উদ্যোগ নিচ্ছে বলে অভিযোগ নাবিকদের। ওই ১৫ নাবিকের পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সাড়ে তিন মিনিটের একটি ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করা হয়েছে। সেখানে ডুবে যাওয়া জাহাজ এমভি মেরিন ট্রাস্ট ১–এর প্রধান প্রকৌশলী বক্তব্য দেন। পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন অপর ১৪ নাবিক। দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘আমরা বাঁচতে চাই, আমাদের বাঁচান।’

ভিডিও বার্তায় প্রধান প্রকৌশলী ফাহিম ফয়সালের ভাষ্য, গত ২০ মার্চ ১৫ জন নাবিক চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজ নিয়ে কলকাতায় যান। সেখানে ২৩ মার্চ পৌঁছান। ২৪ মার্চ পণ্যবাহী কন্টেইনার তোলা শেষে একপাশে কাত হয়ে জাহাজটি উল্টে যায়। এ সময় নাবিকেরা দ্রুত দৌড়ে নেমে পড়েন। কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ তাঁদের নিয়ে মেরিন ক্লাব হোটেল (সি-ম্যান হোস্টেল) রাখে। সেখানে দীর্ঘ এক মাস ধরে তাঁরা অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন। তাঁদের পাসপোর্ট নিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন

ফাহিম ফয়সাল বলেন, তাঁরা কলকাতা ও বাংলাদেশে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু দেশে ফেরাতে কেউ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। দেশের মালিকপক্ষ নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও কয়েক দিন ধরে আর কোনো যোগাযোগ করছে না। হোস্টেলে যেকোনো সময় খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। নাবিকদের সবাই দেশে ফিরতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে উচ্চস্বরে আকুতি জানাতে থাকেন।

ফাহিম ফয়সাল বলেন, ‘আমাদের বাঁচান, আমাদের যেন বলির পাঠা বানানো না হয়। আমরা বাঁচতে চাই। আমাদের জীবন হুমকির মুখে। যেকোনো সময় বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে। আমরা সবাই এক কাপড়ে আছি। আমরা নিরুপায়।’
আটকে পড়া নাবিকদের মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা শিবপুর গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে মিজানুর রহমান রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে গতকাল দুপুরে হোয়াটসঅ্যাপে সাড়ে আট মিনিট এই প্রতিবেদকের কথা হয়। মিজানুর বলেন, তাঁরা ৭টি কক্ষে ১৫ জন অবস্থান করছেন। তাঁদের ঘরের বাইরে যেতে দেওয়া হয় না। তাঁদের কাছে কোনো টাকাও নেই। পড়ালেখার সনদপত্রসহ সব পোশাক জাহাজের মধ্যে রয়েছে। সেটা ডুবে গেছে। এখানে যে খাবার দেয় সেগুলো তেমন খাওয়া যায় না। খুবই কষ্টের মধ্যে রয়েছেন তাঁরা।

মিজানুর আরও বলেন, বর্তমানে কোনো পক্ষই সাড়া দিচ্ছে না। খুবই বিপদের মধ্যে রয়েছেন নাবিকেরা। যেকোনো সময় খাবার দেওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ডুবে যাওয়ার সময় কেউ ফোন নিয়ে নামতে পারেননি। তিনিই একমাত্র একটি ফোন নিয়ে নামতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে আমরা দেশে ফিরতে চাই। এখানে যেসব নাবিক রয়েছেন তাঁরা দেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। তাঁরা সবাই পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে চান। আমাদের বাঁচান।’

সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের নৌবাণিজ্য কার্যালয়ের মুখ্য কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘উদ্ধার করতে না পারায় ২৩ এপ্রিল জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে মালিকপক্ষ। এরপর নাবিকদের দেশে ফেরানোর জন্য মালিকপক্ষকে আমরা তাগাদা দিয়েছি।’

এমভি মেরিনট্রাস্ট–০১ জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান মেরিনট্রাস্ট লিমিটেডের ক্যাপ্টেন সাহিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও সাড়া দেননি।