• মে ৭, ২০২২
  • শীর্ষ খবর
  • 188
ইন্টারপোলের রেড নোটিশে হারিস চৌঃ সহ সিলেটের দু’জন

নিউজ ডেস্কঃ আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থার (ইন্টারপোল) রেড নোটিসে ঝুলছে ৬৪ জন বাংলাদেশির নাম। এর মধ্যে সিলেটের দুজন রয়েছেন।

তারা হচ্ছেন- একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ‘মৃত’ হারিছ চৌধুরী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি এসএইচএমবি নূর চৌধুরী।

তাদের মধ্যে হারিছ চৌধুরীর বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দিঘিরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের দর্পনগর গ্রামে। আর এসএইচএমবি নূর চৌধুরীর বাড়ি সিলেটে দক্ষিণ সুরমার লাউয়াই এলাকায়।

সিলেটি দুজন ছাড়া ইন্টারপোলের লাল বিজ্ঞপ্তিভুক্ত বাকি ৬২ অপরাধী হলেন- মো. শহিদ উদ্দিন খান, খোরশেদ আলম, ওয়াসিম, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ, গিয়াস উদ্দিন, মিজান মিয়া, অশোক কুমার দাশ, চন্দন কুমার রায়, একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত রাতুল আহমেদ বাবু, মো. লালু সিরাজ মোস্তফা, ‘রাজাকার’ জাহিদ হোসেন খোকন, হোসেন ওরফে সৈয়দ হোসেন, আজিজুর রহমান, সৈয়দ মো. হাসান আলী, অজয় বিশ্বাস, তরিকুল ইসলাম, আব্দুল জব্বার, হানিফ, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, মোহাম্মদ সবুজ ফকির, শফিক-উল, মোহাম্মদ মনির ভূঁইয়া, আমান উল্লাহ শফিক, যুদ্ধাপরাধী আবুল কালাম আজাদ, সাজ্জাদ হোসেন খান, জাহিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, মকবুল হোসেন, মারা গেছে বলে জনশ্রুতি থাকা ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ কালা জাহাঙ্গীর ওরফে ফেরদৌস, মো. নাঈম খান ইকরাম, মো. ইউসুফ, আব্দুল আলিম শরিফ, নুরুল দীপু, আহমেদ মজনু, মোহাম্মদ ফজলুল আমিন জাভেদ, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি আব্দুর রশিদ খন্দকার, খুনি শরিফুল হক ডালিম, খুনি এএম রাশেদ চৌধুরী, মোসলেম উদ্দিন খান, আহমেদ শরিফুল হোসেন, নাজমুল আনসার, রউফ উদ্দিন, মোহাম্মদ আতাউর রহমান চৌধুরী, সালাহউদ্দিন মিন্টু, একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত মাওলানা মোহাম্মদ তাজউদ্দিন, গোলাম ফারুক অভি, আমিনুর রহমান, হারুন শেখ, মিন্টু, চান মিয়া, শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদত হোসেন, খোরশেদ আলম, প্রশান্ত সরদার, মোনতাজ বসাক, সুলতান সাজিদ, নাসিরউদ্দিন রতন, আতাউর রহমান, তৌফিক আলম, শামীম আহমেদ, রফিকুল ইসলাম, জাফর আহমেদ, আমিনুর রসুল, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ, শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, নবী হোসেন, তারভীর ইসলাম জয়, আব্দুল জব্বার, জিসান আহমেদ, কামরুল আলম মুন্না ও কামরুজ্জামান।

অনেক দিন ধরে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে চিঠি চালাচালি করেও সিলেটি দুইজনসহ এই ৬৪ জনকে ফিরিয়ে আনতে পারেনি বাংলাদেশ পুলিশ। তবে বিভিন্ন সময়ে ১৫ জন অপরাধীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে অপরাধ করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে ইন্টাপোলের সহায়তা নিয়ে থাকে বাংলাদেশ পুলিশ। কোন অপরাধী কোন দেশে অবস্থান করছেন- সেটা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে ইন্টারপোল।

অপরাধীর অবস্থান নিশ্চিত হতে পারলে অনেক সময় ধরা যায়। তবে অনেক সময় দেখা যায়, অবস্থান নিশ্চিত হতে হতেই অপরাধীরা অবস্থান বদলে ফেলে। অনেক সময় সংশ্লিষ্ট দেশের আইনের ফাঁক গলিয়ে অধরা থেকে যায়।

বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, পুলিশ বা তদন্ত সংশ্লিষ্ট কোনো ইউনিট যদি মনে করে তার আসামি বিদেশে পালিয়ে আছে এবং ফিরিয়ে আনা জরুরি, তখন তার বিষয়ে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেয়া হয়।

সেক্ষেত্রে ইন্টারপোলের কিছু নিয়ম আছে, সেগুলো মেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হয়। ইন্টারপোলের এই লাল নোটিসে অপরাধীদের বিষয়ে সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতি পাঁচ বছর পরপর তথ্য হালনাগাদ করা হয়।

তবে ওই অপরাধীদের অবস্থান ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয়। অবস্থান নিশ্চিত জানা গেলে সরাসরি সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। এই পরিস্থিতিতে বিদেশে আত্মগোপন করা এসব সন্ত্রাসী ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

সূত্রটি আরও জানায়, ইন্টারপোলের ‘ওয়ান্টেড পারসন্স’ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই সংস্থাটির ওয়েবসাইটে ঝুলছে বাংলাদেশের পলাতক ৬৪ শীর্ষ অপরাধীর নাম ও ছবি। এ তালিকায় রয়েছেন যুদ্ধাপরাধী, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্তরা।

মাঝে মধ্যে দুয়েকজন ভারত, দুবাই, নেপালে আটক হওয়ার তথ্য পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখা পায়। তবে তাদের সবাইকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না। ভারতে মোল্লা মাসুদ, শাহাদত, তানভীরুল ইসলাম জয়, নেপালে সুব্রত বাইন, দুবাইয়ে জিসান ও আতাউর ধরা পড়লেও ওই দেশের আইনের ফাঁক গলিয়ে তারা এখন অধরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদেশে আত্মগোপন করা সন্ত্রাসীরা একাধিক পাসপোর্ট ব্যবহার করে ফেরারি থাকছে। বছর দশেক আগে নেপালে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন আটক হওয়ার পর তার কাছ থেকে ভারতীয় পাসপোর্ট পাওয়া যায়। ওই পাসপোর্টের ভিত্তিতে তাকে নেপালের কাঁকরভিটা সীমান্ত দিয়ে ভারতে ‘পুশ ব্যাক’ করা হয়।

একইভাবে বছর পাঁচেক আগে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদত কলকাতা পুলিশের হাতে আটক হলেও পরবর্তী সময়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। শাহাদত ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে দুবাই হয়ে ইতালি চলে যান।

২০১৯ সালের ৩ অক্টোবর দুবাই পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন জিসান। তিনি ভারতীয় নাগরিক হিসেবে দুবাইয়ে আত্মগোপন করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে জিসান জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে লন্ডন চলে যান। ফেনীর তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি হয়। আতাউর বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন।

ফ্রান্সের লিয়নে অবস্থিত ইন্টারপোল সদর দপ্তর থেকে পরিচালিত সংস্থাটির ওয়েবসাইটে ‘রেড নোটিস অব ওয়ান্টেড পারসন্স’ তালিকায় বিভিন্ন দেশের মোট সাত হাজার ৩১৫ জন অপরাধীর ছবি, নাম ও জাতীয়তা তথা দেশের নাম উল্লেখ আছে। এই তালিকায় বাংলাদেশের ৬৪ জন অপরাধীর নাম রয়েছে।

উল্লেখ্য, ইন্টারপোলের রেড নোটিশে থাকা সিলেটের হারিছ চৌধুরীকে নিয়ে রহস্য আরও ঘণিভূত হয়েছে। তার জীবনটাই ছিল রহস্যময়। দ্রুত উত্থান আর তার চেয়েও দ্রুততম সময়ে পতনের গল্প, তবে সবচেয়ে রহস্যময় ছিল তার অন্তর্ধান।

২০০৭ সালে হঠাৎ একদিন আত্মগোপনে চলে গেলেন তিনি। পরের ১৪ বছর কোনো খোঁজ নেই। এক যুগের বেশি সময় পর গত জানুয়ারি মাসে হঠাৎ জানা গেলো- তিনি মারা গেছেন, তাতে রহস্য আরও বাড়লো। চারদলীয় জোট সরকারের আমলের এই প্রভাবশালী রাজনীতিকের জীবন-মৃত্যু যেন রহস্যে ঠাসা।