• মে ১৮, ২০২২
  • শীর্ষ খবর
  • 214
সুরমা কাঁদাচ্ছে সিলেট মহানগরকে

নিউজ ডেস্কঃ সিলেট শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদী কারনে আকস্মিক বন্যার কবলে পড়েছে সিলেট মহানগরী। বছরের পর বছর ধরে খনন না করায় তলদেশ ভরাট হয়ে এ নদী আর জল ধরে রাখতে পারছে না তার পেটে। তাই গত এক সপ্তাহের ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ফুলে-ফেঁপে গ্রাস করেছে সিলেট নগরীর প্রায় অর্ধেক।

সিলেট নগরী বন্যকবালিত হওয়ার প্রধান কারণ যে সুরমা নদী- বিষয়টি উঠে এসেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্যে। বুধবার (১৮ মে) সিলেট পরিদর্শনে এসে তেমনটিই জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি আশ্বাস প্রদান করেছেন, আগামী বর্ষার আগেই সুমরাসহ সিলেটের নদীগুলো খনন করা হবে।

বুধবার দুপুরে নগরীর চালিবন্দরে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। এই দুই নদী খনন করতে হবে। এ ব্যাপারে আমাদের সরকার ও প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক।’

মন্ত্রী বলেন, ‘সিলেটে এই মৌসুমে সব সময়ই ঢল নামে। আমরা ছেলেবেলাতেও এমনটি দেখেছি। কিন্তু পানি আটকে থাকত না। চলে যেত। কারণ আমাদের আগে অনেক পুকুর ও দিঘি ছিল। প্রত্যেক বাড়ির সামনে পুকুর ছিল। আর সিলেটকে বলা হতো দিঘির শহর। কিন্তু এখন আমরা নগরীর ভেতরের সব পুকুর-দিঘি ভরাট করে বড় বড় বিল্ডিং করেছি। হাওরগুলো ভরাট করে ফেলেছি। এ ছাড়া প্রধান নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। খালি মাঠগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে পানি নামতে পারছে না।

সিলেটের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের নদী সুরমা। সিলেটের জকিগঞ্জে ভারত থেকে নেমে আসা বরাক মোহনা থেকে সুরমা নদীর উৎপত্তি। ২৪৯ কিলোমিটার বা ১৫৫ মাইল দৈর্ঘ্যের নদীটি সিলেট নগরী হয়ে সুনামগঞ্জ জেলার বাউলাই নদীর মোহনায় মিশেছে। বর্ষায় বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সহজেই টইটুম্বুর হয় নদীটি। দুকোল উপচে পানি গড়ায় তীরবর্তী জমি ও জনবসতিতে। একই কারণে সিলেট নগরীতে ঢুকে সুরমা উপচানো পানি। এবার তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে গ্রাস করেছে সিলেট মহানগরীকে। মহানগরীর প্রায় অর্ধেক এলাকা গত ৩ দিন থেকে জলমগ্ন। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট। চরম দুর্ভোগে আছেন মহানগরীর বন্যাকবলিত মানুষ।

সুরমার প্রকট নাব্য সংকট চোখে পড়ে শীত মৌসুমে। যে নদী দিয়ে একসময় জাহাজ চলতো। সেই সুরমার বুকে শুষ্ক মৌসুমে বাচ্চারা খেলাধুলা করে। একাধিক জায়গায় সুরমার বুকে জাগে বালুচর। সবুজ ঘাসে গরু চরান রাখালরা। আবার কোথাও ছেলেরা হাত দিয়ে পানি সেচে মাছ ধরে।

সুরমা খননে ২০১২ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেট থেকে একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর নদী খননে সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষার পর নদী খননে উদ্যোগ নেয়ার কথা সে সময় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। এরপর এ ব্যাপারে আর উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

২০১৭ সালে ফের সুরমা নদী খননের জন্য সমীক্ষা চালানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত এ সমীক্ষা প্রতিবেদনও আলোর মুখ দেখেনি। অবশ্য ২০১৮ সালে সিলেট সদর উপজেলার কানিশাইলে ৬০০ মিটার সুরমা নদী খনন করা হয়। এ সময় সিলেট সদর উপজেলা এবং কানাইঘাট উপজেলার কয়েকটি অংশে নদী খননের জন্য প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। কিন্তু তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে নদীটির উৎসমুখের ৩২ কিলোমিটারে ৩৫টি জায়গাসহ বিভিন্ন স্থানে পলি জমে ভরাট হয়ে পড়েছে তলদেশ। এ অবস্থায় এ নদীর খনন ছাড়া সিলেট নগরীর সুরমা তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বর্ষা মৌসুমে জলবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হবে না বলে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য।

সিলেট মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ দরকার মন্তব্য করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন হলেও আমরা সুফল পাচ্ছি না কেন? জনগণের টাকার অপচয় না করে স্থায়ী সমাধানের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী আগামী শুষ্ক মৌসুমেই সুরমা নদীর তলদেশ খননের ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’