• মার্চ ৪, ২০২৩
  • লিড নিউস
  • 113
সিলেটে শহীদের নামে ‘স্মৃতি উদ্যান’ উদ্বোধন

নিউজ ডেস্ক: নতুনভাবে পরিচিতি পেয়েছে সিলেটের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি। স্বাধীনতার ৫২ বছর পর ব্যক্তি উদ্যোগে এই বধ্যভূমিকে সংরক্ষণ করে শহীদ স্মৃতি উদ্যান নির্মাণ করা হচ্ছে। এর কাজ শেষ পর্যায়ে। শনিবার (৩ মার্চ) বিকেলে ‘শহিদ স্মৃতি উদ্যানটি’র উদ্বোধন করা হয়। ফিতা কেটে এর উদ্বোধন করেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী।

এসময় এখানে গণকবর হওয়া বীর শহিদদের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন এবং উদ্বোধনের পর শহিদদের কবরে ফুল দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা জানান তারা। এসময় স্বজনরা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন এবং তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু গড়াতে থাকে।

সিলেট সেনানিবাসের সহযোগিতা ও সিলেটের দুটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উদ্যোগ এবং অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার শহীদ স্মৃতি উদ্যান, সিলেট’। গৌরবান্বিত পরিবার দুটি হচ্ছে- শহিদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আব্দুস সালাম বীরপ্রতীক।

মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আব্দুস সালাম বীরপ্রতীক জানান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসজুড়ে যেখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ছিল সেখানে এখন রয়েছে সিলেট ক্যাডেট কলেজ।কলেজের পেছনে পূর্বদিকের টিলার পাশে মুক্তিকামী বাঙালিদের ধরে নিয়ে পাকহানাদাররা নির্যাতন চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছে,ওই জায়গাটিই বধ্যভূমি।বধ্যভূমি সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় গত বছর এখানে শহীদদের স্মরণে ‘স্মৃতিসৌধ’ নির্মাণ করে সিলেটের গণপূর্ত বিভাগ।

কর্নেল আব্দুস সালাম বলেন, প্রাথমিকভাবে ওই বধ্যভূমিতে শহীদ হওয়া ৬৬ জনের নাম পেয়েছে শহীদ স্মৃতি উদ্যান বাস্তবায়ন কমিটি। এই স্মৃতি উদ্যানটি পরিচিতি পাবে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার শহীদ স্মৃতি উদ্যান, সিলেট’ নামে।

আব্দুস সালাম বলেন, গণকবরে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় পেতে সিলেটের স্থানীয় পত্রিকাতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে স্মৃতি উদ্যানে ৬৬ জন শহীদের নামফলক বসানো হয়েছে।পরবর্তী সময়ে আরও শহীদের সন্ধান পাওয়া গেলে তাদের নামও ফলকে যুক্ত করা হবে।‘স্মৃতি উদ্যানে’ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য ওই এলাকাটি সাজিয়ে-গুছিয়ে নান্দনিক রূপ দেওয়ার পরিকল্পনাও চলছে বলে জানান তিনি।

‘শহীদ স্মৃতি উদ্যান’ নির্মাণে আরেক উদ্যোক্তা শহীদ ডা.শামসুদ্দিন আহমদের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা ডা. জিয়াউদ্দিন আহমদ বলেন, শহীদ পরিবার নিয়ে তেমন কিছু ভাবাও হচ্ছে না, তেমন কাজও হচ্ছে না। বাংলাদেশে একাত্তরে গণহত্যার খবর বহির্বিশ্বের মানুষ জানেনই না।গণহত্যার বিষয়টি আমাদের আরও ব্যাপক প্রচার করতে হবে।শহীদ পরিবারের অনেক সদস্যই মানসিক সমস্যায় ভুগতে ভুগতে মারা যাচ্ছেন।অনেক পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।এগুলো তুলে ধরতে হবে।

তিনি বলেন, গুয়েতেমালার চেয়েও জঘন্য টর্চার সেল ছিল সিলেট ক্যাডেট কলেজের পাশের এ বধ্যভূমি। কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরও স্থানটি অযত্ন-অবহেলায় পড়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সাধারণ জনগণের ত্যাগকে সবার সামনে তুলে ধরতেই শহীদ স্মৃতি উদ্যান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সিলেট ক্যাডেট কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০০৭ সালে পুরো জায়গাটি চিহ্নিত করে।গত বছর এখানে বধ্যভূমি সংরক্ষণের এগিয়ে আসেন কর্নেল আব্দুস সালাম এবং ডা. জিয়াউদ্দিন আহমদ।সিলেট সেনাবাহিনীর অনুমতি নিয়ে এবং সিলেট এরিয়া কমান্ডের সহযোগিতায় ‘স্মৃতি উদ্যান’ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

সিলেট গণপূর্ত বিভাগ জানায়, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ১৯৭১ সালের বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিসৌধ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় জেলার পাঁচটি বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে টেন্ডার আহ্বান করা হয়।একই বছরের ডিসেম্বর মাসে কার্যাদেশ দেওয়া হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।বর্তমানে চারটি বধ্যভূমির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

পরিচয় মিলছে যাদের- পরিচয় পাওয়া শহীদরা হলেন- নারায়াণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার মোসলেহ উদ্দিন ভুঁইয়ার ছেলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল ড. এ এফ জিয়াউর রহমান, হবিগঞ্জ জেলার আউশকান্দি এলাকার সৈয়দ সাজিদ আলীর ছেলে সৈয়দ সিরাজ আবদাল,সিলেট নগরীর পুরাণ লেন এলাকার উপেন্দ্র কিশোর সেনগুপ্তের ছেলে বিমলাংশু সেন, ছড়ারপাড় এলাকার আব্দুন নুরের ছেলে বাছির মিয়া, সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দেউল গ্রামের মন্তাজ আলীর ছেলে নুরুল হুদা গউস, ইপিআর ক্যাপ্টেন আলাউদ্দিন। সিলেট নগরীর মুগলটুলা এলাকার মশরফ আলীর ছেলে সোনাওর আলী, মিরাবাজার এলাকার শারদাচরণ দেবের ছেলে শুভেন্দু শেখর দেব শংকর,একই এলাকার গিরিধারী চক্রবর্তীর ছেলে গির্বানী কান্ত চক্রবর্তী, তার ছেলে গকুলানন্দ চক্রবর্তী ও গঙ্গোত্রী চক্রবর্তী, খাদিমপাড়া দত্তগ্রাম এলাকার ইয়াকুব আলীর ছেলে সিদ্দিক আলী, একই গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে আব্দুর রব হীরা।

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার খলাগ্রামের সূর্যকুমার ধরের ছেলে সুরতিমোহন ধর, একই গ্রামের দীনরাম দেবের ছেলে নরেন্দ্র দেব, সিলেট নগরীর জল্লারপাড় এলাকার বলেনদ্র চন্দ্র রায়ের ছেলে শুভন্দ্র শেখর রায়, সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ছোটদেশ এলাকার আছদ্দর আলীর ছেলে তোতা মিয়া, সিলেট সদর উপজেলার মহালদিক গ্রামের আনোয়ার পাত্রের ছেলে কুমেদ পাত্র, একই গ্রামের কানতুর পাত্রের ছেলে ফরছন পাত্র, রবাই মিয়ার ছেলে ইসরাইল আলী, সৈয়দ আলীর ছেলে আব্দুর রহমান, কনাই মিয়ার ছেলে আব্দুল গনি, মুছন আলীর ছেলে রমজান আলী।

সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল এলাকার হামিদ উল্লার ছেলে হাজী আমজদ আলী, সিলেট নগরীর আখালিয়া ব্রাহ্মণশাসন এলাকার করুণাময় ভট্টাচার্যের ছেলে কালিপদ ভট্টাচার্য, তার ছেলে হীরেন্দ্র ভট্টাচার্য, নগরীর নয়াটিলা এলাকার সদাই নমঃশুদ্রের ছেলে সুখাই নমঃশুদ্র, সিলেট সদর উপজেলার উমদারপাড়া গ্রামের আলাই মিয়ার মেয়ে ছুরেতুননেছা, একই গ্রামের ওয়াহাব উল্লার মেয়ে রহিমা বেগম ও খলিলা বেগম, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার খোজারখলা গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে তজমুল আলী।

সিলেট সদর উপজেলার মহালদিক গ্রামের আব্বাস আলীর মেয়ে ময়না বিবি, গোয়াইনঘাট উপজেলার বীরকুলি গ্রামের ছমেদ আলীর ছেলে আব্দুল খালিক, সিলেট সদর উপজেলার লাখাউড়া গ্রামের হায়দার মিয়ার ছেলে আব্দুল মজিদ, একই উপজেলার পোড়াবাড়ি গ্রামের রামচরণ উড়াংয়ের সন্তান দূর্গা উড়াং ও ভাদুয়া উড়াং, একই গ্রামের লিব উড়াংয়ের সন্তান ঘাটমা উড়াং, একই উপজেলার বাবার হাট এলাকার কিশোরপাত্রের ছেলে শচীন্দ্রপাত্র, মহালদিক গ্রামের ছফর আলীর ছেলে আব্দুল গণি, সিলেট সদর উপজেলার লালবাগ এলাকার আব্দুল আলীর ছেলে জহির আলী, একই গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে জফুর আলী। সিলেট সদর উপজেলার বালিয়াকান্দি গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে আব্দুল ছোবহান, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বরইকান্দি গ্রামের সৈয়দ আহমদের ছেলে আব্দুল আলী, সিলেট সদর উপজেলার জৈনকারকান্দি গ্রামের ইব্রাহিম আলীর ছেলে সাজিদ আলী, একই উপজেলার বাউয়ারকান্দি গ্রামের সফর আলীর ছেলে আব্দুল গনি, গোয়াইনঘাট উপজেলার কচুয়ারপাড় গ্রামের উমেদ আলীর ছেলে আকবর আলী, একই গ্রামের ফুরকান আলীর ছেলে ইউসুফ আলী, সিলেট সদর উপজেলার দাফনাটিলা গ্রামের ইসরাইল আলীর ছেলে কুটি মিয়া, একই উপজেলার কালাগুল এলাকার কেয়ামত আলীর ছেলে সুরুজ আলী।

সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর গ্রামের ফজল খানের ছেলে নুরুল হক খান, সিলেট সদর উপজেলার মহাজনপট্টি এলাকার গুরুচরণ মিত্রের ছেলে গজেন্দ্রলাল মিত্র, একই এলাকার মদনমোহন বণিকের ছেলে প্রাণ গোবিন্দ বণিক, শুধাংশু শেখর দত্তের ছেলে সুনীল দত্ত, সিলেট নগরীর সুবিদবাজার নয়াবস্তি এলাকার নারায়ন সিংহের ছেলে আনন্দ সিংহ, তার ছেলে খগেন্দ সিংহ, বড়বাজার রায়হোসেন এলাকর গরবা সিংহের ছেলে গৌরমোহন সিংহ, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার কর্মকলাপতি গ্রামের বৃন্দাবন চন্দ্র দেবের ছেলে বসন্ত কুমার দেব।

সিলেট নগরীর তাঁতীপাড়া এলাকার বংকেশ দাশ, সিলেটের ওসমানীনগর উপজলার তাজপুর রবিদাশ এলাকার গজেন্দ্র কুমার দেবের ছেলে মিহির লাল দেব এবং মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার নন্দনগর গ্রামের আব্দুল গণি চৌধুরীর ছেলে আব্দুল আহাদ চৌধুরী, সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণবাঘার মসিউদ্দিন চৌধুরী ছেলে সাইফুদ্দিন চৌধুরী।এ ছাড়া ইপিআরের মেজর আব্দুল্লাহ, ক্যাপ্টেন খালেদ, মেজর চৌধুরী শহীদ হেয়েছেন। তবে তাদের পিতার পরিচয় পাওয়া যায়নি।