• ডিসেম্বর ১, ২০২৩
  • খেলাধুলা
  • 124
সিলেটে জয় থেকে ৩ উইকেট দূরে বাংলাদেশ

ক্রীড়া ডেস্কঃ নাজমুল হোসেন শান্তর ইতিহাসগড়া সেঞ্চুরির পর আজ চতুর্থ দিনে মুশফিক-মিরাজের ফিফটিতে তিনশ ছাড়ানো লিড পায় বাংলাদেশ। ৩৩২ রানের বড় লক্ষ্য তাড়ায় ভালো শুরুর প্রত্যাশায় ছিল নিউজিল্যান্ড, তবে তাইজুলের ঘূর্ণিতে সব ভেস্তে গেছে। স্কোরবোর্ডে একশ’ রান যোগ করতেই ৬ উইকেট হারিয়ে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে সফরকারীরা।

চতুর্থ দিনের খেলা শেষে নিউজিল্যান্ডের স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে টিকে আছেন কেবল ড্যারিল মিচেল। শেষ দিনে আগামীকাল তাদের টপকাতে হবে ২১৯ রানের পাহাড়। অন্যদিকে, ঘরের মাঠে টেস্টে প্রথমবার নিউজিল্যান্ডবধে আর মাত্র ৩ উইকে দূরে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও চার উইকেট তুলে নিলেন টাইগার স্পিনার তাইজুল ইসলাম।

ভারত বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর ঘরের মাঠে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ ছিল বাংলাদেশের। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রের শুরুতেই প্রতিপক্ষ শক্তিমত্তা-পরিসংখ্যানে এগিয়ে থাকা নিউজিল্যান্ড। অভিজ্ঞ কেইন উইলিয়ামসন, ডেভন কনওয়ে কিংবা ড্যারিল মিচেল-কে নেই সফরকারীদের দলে।

অন্যদিকে ঠিক বিপরীত চিত্র বাংলাদেশের। অভিজ্ঞ তিন ক্রিকেটার তামিম ইকবাল, লিটন দাস ও অধিনায়ক সাকিবকে ছাড়াই সিলেটে খেলতে নামে লাল-সবুজের দল। সাকিবের অনুপস্থিতিতে অধিনায়কের নেতৃত্বভার ওঠে নাজমুল হোসেন শান্তর কাঁধে। তরুণ নেতৃত্ব ও দল নিয়েই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে দারুণ শুরুর পথে স্বাগতিকরা।

সিলেট টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৩১০ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে কেইন উইলিয়ামসনের লড়াকু সেঞ্চুরিতে ভর করে তাদের সংগ্রহ ছিল ৩১৭। ৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে দারুণ জবাব দেয় বাংলাদেশ। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং শেষে আজ কিউইদের সামনে ৩৩২ রানের পাহাড়সম টার্গেট ছুড়ে দেয় বাংলাদেশ।দলের পক্ষে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ১০৪, মুশফিকুর রহিম ৬৭ ও মেহেদি হাসান মিরাজ অপরাজিত ৫০ রান করেন। নিউজিল্যান্ডের স্পিনার এজাজ প্যাটেল সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন।

এর আগে এতবড় রান তাড়া করে জয়ের নজির নেই নিউজিল্যান্ডের। বড় লক্ষ্য তাড়ায় এদিন শুরুতেই হোঁচট খায় কিউইরা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দেন শরিফুল ইসলাম। এই বাঁহাতি পেসারের খাটো লেন্থের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন টম লাথাম। ডাক খেয়ে এই ওপেনার সাজঘরে ফেরায় রানের খাতা খোলার আগেই উইকেট হারায় সফরকারীরা।

লাথাম ফেরার পর কনওয়েকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস মেরামতের চেষ্টায় ছিলেন সাবেক অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান এ যাত্রায় ব্যর্থ হলেন। তাইজুলের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হন তিনি! লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ার আগে ২৪ বলে করেছেন ১১ রান। এরপর তাইজুলকে অনুসরণ করলেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

থিতু হওয়ার আগেই হেনরি নিকোলসকে বিদায় করেন এই অলরাউন্ডার। ১৩তম ওভারের চতুর্থ বলে মিরাজকে সুইপ করতে গিয়ে ঠিকমতো টাইমিং করতে পারেননি নিকোলস। টপ এজ হয়ে বল ওঠে সোজা আকাশে। শর্ট ফাইন লেগ থেকে কয়েক পা সরে বল তালুবন্দি করেন নাঈম। ২ রান করে নিকোলস ফেরায় ৩০ রান তুলতেই টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় নিউজিল্যান্ড।

এরপর মিচেলকে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন কনওয়ে। চা বিরতি থেকে ফিরেই এই জুটি ভেঙেছেন তাইজুল ইসলাম। এই বাঁহাতি স্পিনারের টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বল ডিফেন্স করতে গিয়ে সিলি পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েছেন কনওয়ে। ২২ রান করে এই ওপেনার ফেরায় দলীয় ফিফটির আগেই সাজঘরে ফেরে সফরকারীদের চার ব্যাটার।
বাকিদের আসা-যাওয়ার মিছিলে লড়ে যাচ্ছেন ড্যারিল মিচেল।

প্রথম ইনিংসে চার উইকেট শিকার করা তাইজুল দ্বিতীয় ইনিংসেও হুল ফোটান সিলেটে। কনওয়ের পর ড্রেসিংরুমে ফেরত পাঠান কিপার-ব্যাটার টম ব্লান্ডেলকে। বাউন্স করা ডেলিভারিটি ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি ব্লান্ডেল। ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে বল জমা পড়ে উইকেটরক্ষক সোহানের গ্লাভসে।

তিনশ ছাড়ানো লক্ষ্য তাড়ায় চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড। স্কোরবোর্ডে একশ রান যোগ করতে তারা হারিয়ে ফেলে ৬টি উইকেট। এরপর সপ্তম উইকেট জুটিতে কিছুটা প্রতিরোধের চেষ্টা করেন ড্যারেল মিচেল ও কাইল জেমিসন। সেই তাইজুলের স্পিনবিষেই নিল হলেন জেমিসন। ২৮ বলে ৭ রান করেন তিনি।

৮৬ বলে ৪৪ রান করে অপরাজিত আছেন কিউই মিডল অর্ডার ব্যাটার ড্যাারিল মিচেল। সফরকারীদের ব্যাটিংয়ে স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে এখন কেবল তিনিই আছেন। তার সঙ্গে ২৪ বলে ৭ রান করে অপরাজিত আছেন ইশ সোধি। বাংলাদেশের হয়ে এই ইনিংসেও সবচেয়ে সফল বোলার তাইজুল। ২০ ওভার বল করে ৭ মেইডেনে ৪০ রান খরচায় ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন। এ ছাড়া একটি করে উইকেট নিয়েছেন শরিফুল, মিরাজ ও নাইম।