• আগস্ট ২২, ২০২৪
  • Uncategorized
  • 28

উপদেষ্টাদের বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ ড. ইউনূসের

নিউজ ডেস্ক: আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্বাহী আদেশে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিধান যুক্ত করা হয়েছিল। তবে এখন এ বিধান বাতিল হচ্ছে। এ জন্য ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের তৃতীয় বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

পরে সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘বৈঠকে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ড. ইউনূস উপদেষ্টাদের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে যেতে বলেছেন।’ তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টা বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন।

প্রেস সচিব আরও জানান, বন্যাকবলিত হয়েছে ১০ জেলা। সর্বশেষ হিসাবে ৩৬ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছে। দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে উপদেষ্টারা এই জেলাগুলো পরিদর্শন করবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তরকে উদ্ধৃত করে শফিকুল আলম জানান, দীর্ঘসময় ধরে অতিবৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এ ছাড়া বন্যার অন্যতম কারণ হলো নদ-নদী ও খালবিল ভরাট হয়ে যাওয়া।

‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’

২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর বিশেষ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) নয়, সরকারকে ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ ও সমন্বয়ের ক্ষমতা দিয়ে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২২’ জারি করেন রাষ্ট্রপতি। অধ্যাদেশে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ বা সমন্বয়ে সরকারের ক্ষমতা শিরোনামে ৩৪(ক) ধারা যুক্ত করা হয়।

ওই ধারায় বলা হয়, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার, গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ভর্তুকি সমন্বয়ের লক্ষ্যে, জনস্বার্থে, কৃষি, শিল্প, সার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গৃহস্থালি কাজের চাহিদা অনুযায়ী এনার্জির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে উৎপাদন বৃদ্ধি, সঞ্চালন, পরিবহন ও বিপণনের নিমিত্তে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে বিদ্যুৎ উৎপাদন, এনার্জি সঞ্চালন, মজুতকরণ, বিপণন, সরবরাহ, বিতরণ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ বা সমন্বয় করতে পারবে।’ পরে সংসদ বসলে অধ্যাদেশটি আইনে পরিণত হয়। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে দফায় দফায় বাড়ানো হয় গ্যাস, বিদ্যুৎ ও তেলের দাম। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ রয়েছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ উৎপাদন, গ্যাস সম্পদ ও পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থের ট্যারিফ বা মূল্য নির্ধারণে গণশুনানির মাধ্যমে জনগণের অধিক সম্পৃক্ততা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সুশাসন, জনপ্রত্যাশা এবং ভোক্তার স্বার্থ নিশ্চিত করতে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩’ এর ৩৪(ক) ধারা বিলুপ্ত করার লক্ষ্যে অধ্যাদেশ জারির বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

উপদেষ্টারা বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করবেন

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সিদ্ধান্ত হয়েছে উপদেষ্টারা বন্যাকবলিত সব জেলা পরিদর্শন করবেন। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বৈঠকে তারা বন্যা পরিস্থিতি, বন্যাদুর্গতদের জন্য সরকার কী করতে পারে এবং কীভাবে সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা যায়, বন্যার পেছনের কারণ কী এবং ভবিষ্যতে বন্যা মোকাবিলায় কী করা যাবে সেসব বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

রিজওয়ানা বলেন, ত্রাণ কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বৃহস্পতিবার বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে ফেনী যাচ্ছেন এবং অধিকাংশ বন্যাকবলিত এলাকায় পৌঁছে ত্রাণ বিতরণে সমন্বয় করবেন।

তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবে হতাহতদের পরিবারের সেবায় একটি ফাউন্ডেশন গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ফাউন্ডেশনের প্রধান হবেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা সদস্য হবেন। ফাউন্ডেশনের কাজ হবে আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং বিপ্লবের স্মৃতি ধরে রাখা, যাতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম জানতে পারে আন্দোলনের সময় কী ঘটেছিল! ফাউন্ডেশনটি হবে একটি আইনি সত্তা।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, জনগণের অর্থ দিয়ে গড়ে ওঠা যেকোনো কাঠামো বা প্রতিষ্ঠানের নামকরণের বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরির বিষয়েও তারা আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, এটি একটি আইনি কাঠামোর আওতায় আনা হবে যাতে কোনো কাঠামোর নামকরণ জনগণের প্রত্যাশাকে প্রতিফলিত করে এবং এটি ফ্যাসিবাদের পক্ষে না যায়।

রিজওয়ানা বলেন, ‘আমরা নীতিগতভাবে গুমের বিষয়ে একটি কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি সমস্ত ঘটনার তদন্ত করবে।’ তিনি বলেন, বিদেশি মাছ ধরার যানবাহন যাতে আমাদের দেশের সামুদ্রিক অঞ্চলে ঢুকতে না পারে সে জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দেন উপদেষ্টারা।

ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করছে সরকার

পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি জেলায় হঠাৎ ভয়াবহ বন্যার কারণ হিসেবে ভারতের বাঁধ খুলে দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে দেশটির সঙ্গে যোগাযোগ করছে সরকার। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ উপদেষ্টা ফারুকী আজম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

উজানে ভারতের বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে বর্ষা মৌসুমের শেষে ভাদ্র মাসে দেশে হঠাৎ ভয়াবহ বন্যা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন নেতা ত্রিপুরায় গোমতী নদীর উজানে ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়াকে বন্যার কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভারতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে।

ভারতের বাঁধ খুলে দেওয়া কিংবা বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণেই বাংলাদেশে বন্যা কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দুর্যোগ উপদেষ্টা বলেন, ‘এটার বিষয়ে যোগাযোগ হচ্ছে। সঠিকভাবে এ বিষয়ে এখন বলতে পারছি না। তবে শুনেছি, বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে।’