• অক্টোবর ২, ২০২০
  • জাতীয়
  • 293
একের পর এক অপকর্মে ক্ষুব্ধ আ’লীগ নেতারা

নিউজ ডেস্কঃ আওয়ামী লীগের ভেতরে থেকে যারা অপকর্ম করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও, একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ক্ষুব্ধ, চিন্তিত।

শনিবার (০৩ অক্টোবর) দীর্ঘ প্রায় ৭ মাস পর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ সভায় বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং করণীয় নির্ধারণ হবে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানান।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেত্রী পাপিয়ার ঘটনায় দেশের রাজনীতিতে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও আওয়ামী লীগকে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়। দলের মধ্যেও ঘটনাটি নিয়ে আলোড়ন তৈরি হয়।

এর পরেও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের দ্বারা বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গেছে। বিশেষ করে করোনা ভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর দুর্নীতি, অনিয়ম, কর্তব্যে অবহেলাসহ বিভিন্ন ঘটনায় আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্কের ঝড় ওঠে। এর মধ্যে করোনা প্রতিরোধ সামগ্রী ও চিকিৎসাসেবা প্রতারণা নিয়ে বিভিন্ন দুর্নীতি-অনিয়মের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠে আসে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, এক শ্রেণির নেতাকর্মী ও দলে অনুপ্রবেশকারীদের কারণে আওয়ামী লীগকে বার বার সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তারপরেও একের পর এক অঘটন ঘটছে। এইসব দুষ্কৃতিকারীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দলের এক শ্রেণির নেতা, এমপি এমনকি কোন কোন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছেন। এতে দল ও সরকারকে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে এবং দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব বিষয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় উঠতে পারে বলে নেতারা জানান।

সম্প্রতি সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রবাসে এক নববধূকে ধর্ষণের ঘটনায় সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এই ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর উত্তরা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সবুজ আল সাহবার বিরুদ্ধেও। গৃহকর্মীকে ধর্ষণের দায়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের নরসিংদী জেলার নেত্রী পাপিয়া অর্থনৈতিক অনিয়মসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন। তাকে সংগঠন থেকে পরে বহিষ্কার করা হয়।

এরপর করোনা মহামারির মধ্যে দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত থাকায় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক দাবিদার রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ, মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্টার শারমিন জাহান গ্রেফতার হন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতার সাথে সাহেদের ঘনিষ্ঠতাও ছিল। এদের কারণে নানামুখী সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয় আওয়ামী লীগকে।

শিশু অপহরণ ও পাচারের সঙ্গে জড়িত লুপা তালুকদার নামে একজন গ্রেফতার হয়েছেন। নিজেকে আওয়ামী লীগ পরিবারের একজন বলে দাবি করে আসা এই লুপার সাংবাদিক পরিচয়ও রয়েছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে লুপা তালুকদারের সম্পর্ক ও তাদের সঙ্গে তোলা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

সম্প্রতি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার অভিযোগে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের স্থানীয় দুই শীর্ষ নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহসহ কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্ব পর্যায়ের কয়েকজনকে বহিষ্কার ও কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।

দলের সাথে বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত এক শ্রেণির দুষ্কৃতিকারীরা নানা অপকর্ম করায় তার দায় দলকে নিতে হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান। এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি যাতে না হতে হয়, সে জন্য করণীয় নির্ধারণ করা জরুরি বলে তারা মনে করছেন। তাই বিষয়গুলো দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের আলোচনায় প্রধান্য পাবে বলে তারা জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগে সম্পৃক্ত থেকে বা দলে অনুপ্রবেশ করে নানাভাবে যারা অপকর্ম করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তারপরও অনেকেই দমছেন না। আসলে দল ক্ষমতায় আছে অনেক দিন, এ কারণে কেউ কেউ বেপরোয়া হয়ে উঠে নানা অপকর্ম করছেন। এসব বন্ধ করতে আরও কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আলোচনা হতে পারে।