• মে ৩, ২০২১
  • শীর্ষ খবর
  • 399
সাংসদের ‘হাওর বাংলা’ নিয়ে কথা বলা ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সাংসদের বড় ভাইকে না জানিয়ে বাজারের কিছু জমি বিক্রি করেছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা বিকাশ রঞ্জন সরকার। এ জন্য তাঁকে বাজারে প্রকাশ্যে মারধর করেন সাংসদের ওই ভাই ও তাঁর ছেলে। প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে একটি ঘরে আশ্রয় নেন বিকাশ। সেখানে তাঁকে এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে।

সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার পাইকুরাটি নতুনবাজারে। বিকাশ রঞ্জন সরকারকে মারধর ও অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে মোশারফ হোসেন ওরফে মাসুদ এবং তাঁর ছেলে সাগর হোসেনের বিরুদ্ধে। মোশারফ সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, ধরমপাশা ও জামালগঞ্জ) আসনের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে রতনের বড় ভাই। এবং ধরমপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক।

বিকাশ রঞ্জন সরকার জানান, তাঁদের গ্রামের বাড়ি পাইকুরাটি গ্রামে। গ্রামের পাশেই বাজার। তবে তাঁরা দীর্ঘদিন থেকে উপজেলা শহরে বসবাস করছেন। তিনি সুনামগঞ্জ জেলা শহরে একটি ব্যাংকে কর্মরত। গ্রামে এখনো তাঁদের জমিজমা রয়েছে। সাংসদ মোয়াজ্জেমকে নিয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ‘অন্যের জমি দখল করে সাংসদের হাওর বাংলা’ শিরোনামে সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়। মূলত এরপর থেকেই তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ সাংসদ এবং তাঁর স্বজনেরা।

প্রকাশিত সংবাদে বিকাশের অভিযোগ ছিল, পাইকুরাটি ইউনিয়নের নওধার গ্রামে বানানো সাংসদের বিলাসবহুল বাড়ি ‘হাওর বাংলা’র ভেতরে আরেক ব্যক্তির জমির সঙ্গে তাঁরও ৩০ শতক জমি আছে। সাংসদ এসব দখল করে নিয়েছেন। এ ছাড়া সাংসদের দুই ভাইয়ের নামে তিনি ২ একর ৬৫ শতক জমি একবার দলিল করে দিয়েও কোনো টাকা না পাননি। তখন অবশ্য সাংসদের পরিবারের সঙ্গে বিকাশ রঞ্জন সরকারের ঘনিষ্ঠতা ছিল।

সাংসদের বড় ভাই মোশারফ এসেই তাঁর (বিকাশ) উদ্দেশে বলেন, ‘বিকাশ বাবু তো ভূমিকম্প শুরু করে দিছেন। বাজারের জমি বিক্রি করছেন আমাকে না জানিয়ে, এটা ঠিক করেননি।’

সোমবারের ঘটনা সম্পর্কে বিকাশ রঞ্জন সরকার বলেন, পাইকুরাটি নতুন বাজারে সম্প্রতি তিনি নিজের পাঁচ শতক জমি বিক্রি করেছেন। এই জমিতে থাকা স্থাপনা সরাতে সোমবার তিনি সেখানে যান। বেলা সোয়া একটার দিকে সেখানে আসেন সাংসদের বড় ভাই মোশারফ। তাঁর বাড়ি ওই বাজারেই। এসেই তাঁর (বিকাশ) উদ্দেশে বলেন, ‘বিকাশ বাবু তো ভূমিকম্প শুরু করে দিছেন। বাজারের জমি বিক্রি করছেন আমাকে না জানিয়ে, এটা ঠিক করেননি।’

বিকাশ রঞ্জন তখন আগে জমি দলিল করে দিয়ে টাকা না পাওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন। এখন আর জানানোর মতো সেই সম্পর্ক নেই বলেও জানান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মোশারফ। তিনি অকথ্য ভাষায় তাঁকে গালিগালাজের পাশাপাশি কিলঘুষি মারতে শুরু করেন। তখন মোশারফের ছেলে সাগর হোসেন এসেও তাঁকে মারধর করেন। বিকাশ একপর্যায়ে দৌড়ে বাজারের একটি বাসার সামনের অংশে থাকা রেস্তোরাঁয় আশ্রয় নেন। সেখানে গিয়ে মোশারফ ও তাঁর অনুসারীরা তাঁকে ঘেরাও করে রাখেন। বের হলেই তাঁকে শেষ করে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকেন। এ অবস্থায় বিকাশ ধরমপাশা সার্কেলের দায়িত্বে থাকা সহকারী পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকারকে ও সরকারি জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানান। এরপর ধরমপাশা থানার একদল পুলিশ বেলা আড়াইটার দিকে সেখানে গিয়ে তাঁকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করে।

পার্শ্ববর্তী বাদশাগঞ্জ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থলে যান। দেখতে পান, বিকাশ রঞ্জন সরকার একটি ঘরে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন। বাইরে মোশারফসহ কিছু লোক। পরে পুলিশ যাওয়ার পর বিকাশকে ঘর থেকে বের করে আনে। এরপর তিনিই মোটরবাইকে করে তাঁকে উপজেলা শহরে পৌঁছে দেন।

তবে মোশারফ হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘মারধর বা অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ সত্য নয়। আমি জমিজমা নিয়ে কথা বলার একপর্যায়ে তিনিই (বিকাশ) উত্তেজিত হয়ে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। এখন যা বলছেন, সেগুলো সাজানো।’

ধরমপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ঝগড়া হয়েছে শুনে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে বিকাশ বাবুকে অবরুদ্ধ অবস্থায় পাইনি। পরে তিনি অন্য একটি মোটরসাইকেলে করে আমাদের সঙ্গেই উপজেলা শহরে চলে আসেন। এ নিয়ে থানায় তিনি কোনো অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’