• মার্চ ৫, ২০২২
  • মৌলভীবাজার
  • 476
মৌলভীবাজারে প্রশ্নপত্রে চা-শ্রমিককে ‘কুলি’ উল্লেখ করায় নিন্দার ঝড়

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অফিস সহকারী/ক্রেডিট চেকিং/সার্টিফিকেট সহকারী ও নাজির পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (৪ মার্চ) এ নিয়োগ পরীক্ষায় ভুল প্রশ্নপত্রে চা-শ্রমিকদের হেয় করে ছাপানো প্রশ্নের প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছে চা-শ্রমিক ও তাদের সন্তানরা।

প্রশ্নের দায়িত্বে থাকা কর্তা ব্যক্তির শাস্তির এবং ভুলের দায় নিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা না করলে প্রয়োজনে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে চা-শ্রমিক নেতাদের দাবি।

জানা যায়, বিভাগীয় নির্বাচনী বোর্ড নিয়োগ পরীক্ষা মৌল ১-২২ ছাপানো প্রশ্নে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের অধীন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক/ক্রেডিট চেকিং কাম সায়রাত সহকারী/সার্টিফিকেট সহকারী ও নাজির পদে শুক্রবার ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটে ১শ নম্বরের এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

নিয়োগ পরীক্ষার ছাপানো ৬ নম্বর প্রশ্নে ৫ নম্বরের জন্য ইংরেজিতে অনুবাদ করুন লেখা রয়েছে: ‘শ্রীমঙ্গলকে চায়ের রাজধানী বলা হয়। শ্রীমঙ্গলে ৯২টি চা-বাগান রয়েছে। শ্রীমঙ্গলের চা খুবই উৎপাদনে কুলিরা হাত দিয়ে পাতা সংগ্রহ করে। প্রক্রিয়াজাত চা-পাতা থেকে চা উৎপন্ন করা হয়। ’

এ প্রশ্ন পেয়ে নিয়োগ পরীক্ষা অংশগ্রহণকারী চা-শ্রমিকের সন্তানরা পরীক্ষা দিয়ে আসার পর নিজ নিজ চা-বাগানে এসে প্রতিবাদ মুখর হয়েছেন। তারা বিষয়টি নিয়ে চা ছাত্র পরিষদ নেতা, চা-শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদেরসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর চা-বাগানের চা-ছাত্র পরিষদের নেতা সজল কৈরী, চা-বাগান থেকে প্রকাশিত মাসিক চা মজদুর পত্রিকার সম্পাদক সীতারাম বীন বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থকরী শিল্প চা-শিল্পের প্রাণই হচ্ছে চা-শ্রমিকরা। তাদের পরিচয় হলো চা-শ্রমিক। এ নামেই তাদেরকে সম্বোধন করা হয়। অথচ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নে লেখা হয়েছে চা খুবই উৎপাদনে কুলিরা হাত দিয়ে পাতা সংগ্রহ করে। ‘কুলি’ আপত্তিকর একটি শব্দ। চা-শ্রমিকদের হেয় করতেই এ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে বলে তারা ধারণা করেন। আর তা একটি প্রশাসনিক কার্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় লেখা হয়েছে। ’

তারা আরও বলেন, ‘৬ নম্বর প্রশ্নে আরও লেখা শ্রীমঙ্গলে ৯২টি চা বাগান রয়েছে। তা সম্পূর্ণ ভুল। মূলত পুরো মৌলভীবাজার জেলায় ৯২টি চা বাগান রয়েছে। ’

এ ঘটনার জন্য চা-শিল্পাঞ্চলে প্রতিবাদ জানিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও তারা জানান।

কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদরের ভাইস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা রাম ভজন কৈরী এ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নে আপত্তির শব্দ ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘একটি নিয়োগ পরীক্ষায় ভুল তথ্য, তারপর একটি পরিশ্রমী জাতিগোষ্ঠীকে হেয় করে কীভাবে কুলি আখ্যায়িত করা হয়েছে তা দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জবাব দিতে হবে। ’

তিনি আরও বলেন, এখন সরকারি শ্রম আইনে চা-বাগানের কর্মীদের চা-শ্রমিক সম্বোধন করা হয়েছে। আর শ্রম আইনের পরিপন্থি শব্দ কীভাবে নিয়োগ পরীক্ষায় ব্যবহার করা হলো? এর সুস্পষ্ট জবাব দিয়ে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মীর নাহিদ আহসান বলেন, ‘মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগের অধীন নিয়োগ পরীক্ষায় ‘চা শ্রমিক’ বোঝাতে ভিন্ন শব্দ ব্যবহার করায় সৃষ্ট অসন্তোষ বিভাগীয় নির্বাচনী বোর্ডের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। কাউকে ছোট করা বা আঘাত করার জন্য এরূপ শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। এ অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ইতোমধ্যে বিভাগীয় নির্বাচনী বোর্ড দুঃখ প্রকাশ করছে। ’

সবার অনুভূতি ও ভাবাবেগের প্রতি বিভাগীয় নির্বাচনী বোর্ড শ্রদ্ধাশীল ও সহানুভূতিশীল বলেও জানান তিনি।