• মার্চ ৩০, ২০২২
  • লিড নিউস
  • 188
অনন্ত হত্যা : চারজনের মৃত্যুদণ্ড একজন খালাস

 

নিউজ ডেস্কঃ সিলেটে ব্লগার ও মুক্তমনা লেখক অনন্ত বিজয় দাশ (৩২) হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ৬ আসামির মধ্যে ৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। বুধবার (৩০ মার্চ) দুপুরে সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন (২৫), খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭), সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ (২৫) ও কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫)।

বাকি দুজনের মধ্যে কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ইবনে মঈন (২৪) ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর কারাগারে থাকা অবস্থায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করলে সেখানেই তিনি মারা যান। মারা যাওয়ায় তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। আর অপরজন সিলেট নগরীর রিকাবীবাজার এলাকার বাসিন্দা সাফিউর রহমান ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান (৩০) নামের আসামি খালাস পেয়েছেন।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া চারজনের মধ্যে আবুল হোসেন, ফয়সাল আহমদ ও মামুনুর রশীদ- এই তিন আসামি পলাতক। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ২০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। এছাড়া পলাতকদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। সিলেটের আলোচিত এই হত্যা মামলায় ২৯ সাক্ষীর মধ্যে ৬ বছরে ২৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের সরকারি আইনজীবী মুমিনুর রহমান চার আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং একজনের খালাস পাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

রায় ঘোষণার পর অনন্তের বড় বোনের স্বামী ও সিলেট কর আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সমর বিজয় সী শেখর বলেন, ছেলে খুন হওয়ার পর অনন্তের বাবা রবীন্দ্র কুমার দাশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০১৯ সালে তিনি মারা যান। মা মা পীযূষ রানী দাশও ছেলের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। বর্তমানে প্রায় শয্যাশায়ী বলা যায়। আজ (বুধবার) রায় ঘোষণা হয়েছে। এখন দ্রুত এই রায় কার্যকর হোক।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মনির উদ্দিন বলেন, নৃশংসভাবে অনন্তকে হত্যা করা হয়েছে। এ জন্য মৃত্যুদণ্ডই সর্বোচ্চ শাস্তি। আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। তবে ফারাবীকে কেন আদালত খালাস দিয়েছেন, সেটা পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর বোঝা যাবে। পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পেয়ে অনন্তের পরিবারের সদস্য এবং বাকি আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি দাবি করেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের শাস্তির রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুল আহাদ জানান, এই রায়ে ন্যায়বিচার গুরুতরভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। আমরা আশা করছি- মহামান্য হাইকোর্টে ন্যায়বিচার পাবো।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরীর সুবিদবাজারে নুরানি আবাসিক এলাকার নিজ বাসার সামনে খুন হন ব্লগার অনন্ত। পেশায় ব্যাংকার অনন্ত বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। পাশাপাশি তিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকেও সক্রিয় ছিলেন।

গণজাগরণ মঞ্চ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তিনি সিলেটের গণজাগরণ মঞ্চের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। অনন্ত শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে পূবালী ব্যাংকের জাউয়াবাজার শাখায় চাকরি করতেন অনন্ত। দুই ভাই ও দুই বোনের পরিবারে অনন্ত সবার ছোট ও অবিবাহিত ছিলেন তিনি। মূল বাড়ি সুনামগঞ্জে হলেও অনন্তের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিলেট শহরে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুবিদবাজার নূরানী এলাকায় বসবাস করতেন তিনি। তাঁকে হত্যার আগে অনন্ত দেশের আলোচিত অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে একাধিক লেখা লিখেছিলেন। অভিজিতের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।

হত্যাকাণ্ডের পর অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলা এজাহারে উল্লেখ- বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে।

মামলাটি পরবর্তীতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর করা হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। এতে সন্দেহভাজন আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

অভিযুক্তরা ছিলেন- সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন (২৫), খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭), সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বীরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ (২৫), কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াহইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এ বি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন (২৪), কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫) ও সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় বসবাসকারী সাফিউর রহমান ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান (৩০)।

মামলার দীর্ঘসূত্রিতা শেষে সিলেটের সেই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রায় বুধবার ঘোষণা করা হয়।