• আগস্ট ১৪, ২০২২
  • জাতীয়
  • 221
খবরদার আন্দোলনকারীদের যেন গ্রেপ্তার করা না হয়: প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্কঃ বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বেশ কয়েকটি দল যখন আন্দোলনের ডাক দিয়ে রাজপথে কর্মসূচি বাড়াচ্ছে, সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো ধরনের গ্রেপ্তার অভিযানে না নামার নির্দেশ দিয়েছেন।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশে বিরোধীদের আন্দোলন হতে পারে উল্লেখ করে তিনি এও বলেছেন, সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে বলে বিশ্বাস তার আছে। আন্দোলনের নামে বাড়াবাড়ি দেশের ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের কষ্ট বাড়াবে।

গণভবনে রোববার আওয়ামী লীগের আটটি বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপিকে ইঙ্গিত করে ক্ষমতাসীন দলের নেতা বলেন, ‘তারা আন্দোলন করে কতটুকু সফল হবে জানি না। কিন্তু তারা যেভাবে করতে চাচ্ছে তাতে দেশের জন্য আরও ক্ষতি হবে। অপজিশনসহ নানা জনে নানা কথা বলবে, এর সুযোগ নেয়ারও চেষ্টা করবে। কিন্তু তারা যদি এসব বেশি করতে যায় তাহলে এর প্রভাবেই তো মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে, এটাও তাদের বোঝা উচিত।’

বিরোধীদের অভিযোগ, বর্তমান সরকার দেশে দুর্নীতি করে অর্থনীতির ক্ষতি করছে, মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে, মৌলিক মানবাধিকার পরিস্থিতিও ভালো নয়। এসব কারণে সরকার পতনের পাশাপাশি নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছে তারা। সামনে বড় কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগও রাজপথে শক্তি দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৭ আগস্ট একযোগে সব জেলা-উপজেলা, এমনকি ইউনিয়নে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের বিরোধী দল একটা সুযোগ পাচ্ছে, তারা আন্দোলন করবে, করুক। আমি আজকেও নির্দেশ দিয়েছি খবরদার যারা আন্দোলন করছে তাদের কাউকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয় বা ডিস্টার্ব করা না হয়। তারা প্রধানমন্ত্রীর অফিসও ঘেরাও দেবে, আমি বলেছি, হ্যাঁ আসতে দেব। কেননা আমরা যে আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করছি দেশের কাজ করতে দেশের মানুষ তো সেটা জানে।’

সম্প্রতি রাজধানীতে বিএনপি বেশ কয়েকটি কর্মসূচি বিনা বাধায় করেছে। সাতটি ছোট দল ও সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত মোর্চা ‘গণতন্ত্র মঞ্চও’ কর্মসূচি পালন করেছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিনা বাধায় কর্মসূচি পালন করতে পারা নিয়েও সরকারকে আক্রমণ করেছেন। বলেছেন, ‘তারা দেখাচ্ছে গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ দিচ্ছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমাদের সমাবেশে বাধা দেয়নি, আজকেও শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে পারছি। এটাও একটা প্রতারণা।’

শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের কষ্ট যে হচ্ছে সেটা তার সরকার উপলব্ধি করতে পারছে বলেই প্রতিনিয়ত সেই কষ্ট লাঘবের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে এর দাম সমন্বয় করা হবে বলে ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘যখনই বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমবে, আমরা সঙ্গে সঙ্গেই অ্যাডজাস্ট করব, সেটাও আমার নির্দেশ রয়ে গেছে।’

দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন শুরু হলে বিদ্যুতের সমস্যাও অনেকটাই দূর হয়ে যাবে বলেও জানান সরকারপ্রধান। বলেন, ‘হয়তো আর কিছুদিন আমাদের কষ্ট করতে হবে। আমাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন শুরু হলে বিদ্যুতের এই সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।’

সমসাময়িক সংকট কাটাতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন কমিয়ে আনায় তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা যেতে না যেতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে স্যাংশন এবং পাল্টা স্যাংশন জনজীবনে সর্বনাশ ডেকে আনছে, যার ভুক্তভোগী হচ্ছে সারা বিশ্বের সাধারণ জনগণ।’

তিনি বলেন, ‘আমেরিকা স্যাংশন দিল রাশিয়াকে শায়েস্তা করার জন্য। দেখা যাচ্ছে যে শায়েস্তা হচ্ছে সাধারণ মানুষ। শুধু আমাদের দেশ বলে নয়, ইউরোপের দেশগুলো এমনকি আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া-প্রত্যেকটি মহাদেশের মানুষেরই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সব জিনিসের ওপরই এর একটা প্রভাব পড়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্যাংশন দিয়ে লাভটা কী হলো? বাস্তবিক যদি লাভ কারও হয় তাহলে সেটা আমেরিকা ও রাশিয়ারই হয়েছে। কেননা বিশ্ববাজারে ডলার এবং রুবলের (রাশিয়ার মুদ্রা) মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে। তবে মরছে সাধারণ মানুষ।’

ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেয়ে বাড়তি দর নিচ্ছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আর আমাদের কিছু লোক তো থাকেই অপ্রয়োজনেও জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয় ওই ছুতা ধরে। সেটাই হচ্ছে কিছু কিছু। না হলে এত দাম তো বাড়ার কথা নয় প্রত্যেকটা জিনিসের।’