• আগস্ট ১৪, ২০২৩
  • শীর্ষ খবর
  • 82
সিলেটে গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতে ২৭৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রস্তাব

নিউজ ডেস্ক: সিলেট অঞ্চলে গত বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, সেতু ও কালভার্ট সংস্কার এবং পুনর্র্নিমাণে ২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থায়নে (জিওবি) এই প্রকল্প সুনামগঞ্জের সাত এবং হবিগঞ্জের দুই উপজেলায় বাস্তবায়ন করতে চায় সওজ।

তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অর্থ পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তা ছাড়া প্রকল্পের বিভিন্ন অংশের ব্যয় প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা কমাতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

রোববার প্রকল্পটির মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হবে পরিকল্পনা কমিশনে। এর আগে গত ২৬ জুলাই পিইসির প্রথম সভা হয়। পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন পেলে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি যাবে একনেকে। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব রয়েছে।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় (এডিপি) অননুমোদিত প্রকল্পের তালিকায় রয়েছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, সেতু ও কালভার্ট সংস্কার এবং পুনর্র্নিমাণ-সংক্রান্ত এই প্রকল্প। এতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা। তবে পরে ২৪১ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ব্যয় প্রস্তাব করা হয়। মধ্যম অগ্রাধিকার হিসেবে প্রকল্পটি চিহ্নিত করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেছেন, ‘বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরাপদ করতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন জরুরি।’

সুনামগঞ্জ সদর, শান্তিগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুর ও ছাতক উপজেলা এবং হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ ও লাখাই উপজেলার মহাসড়ক-সড়ক গত বছরের বন্যায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সওজের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, সেতু ও কালভার্ট জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার ও পুনর্র্নিমাণ করা প্রয়োজন।

আর্থিক সংকট সামলে এবং কৃচ্ছ্রসাধনে সরকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাটছাঁট করেছে। পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে, অর্থ সংকটের বিষয়টি বিবেচনা করে এ মুহূর্তে প্রকল্পটির যৌক্তিকতা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে জানাতে হবে। প্রকল্পে বরাদ্দের সীমা নির্ধারণ করেছে সরকার। তাই মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোতে (এমটিবিএফ) সিলিংয়ে অর্থায়ন কীভাবে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি খরচ হবে জমি অধিগ্রহণে। ২৬০ একর জমি অধিগ্রহণে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৬৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
জমি অধিগ্রহণ ব্যয় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করে ডিপিপিতে আলাদাভাবে উল্লেখ করতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রস্তাবিত সড়কের পাশে কত জমি অধিগ্রহণ করা হবে, সড়কে ভবিষ্যতে গাড়ির সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে জমি অধিগ্রহণ কমানো যায় কিনা তাও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।
সড়ক বাঁধ প্রশস্ত ও উঁচু করতে ৪৬ লাখ ৭০ হাজার ঘনমিটার মাটির কাজ করার প্রস্তাব করা হয়েছে প্রকল্পে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। মাটির কাজ যথাযথ সমীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে কিনা, জানতে চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

প্রকল্পের আওতায় ১০ দশমিক ৩০ মিটার প্রস্থের ২১ দশমিক ২৫ কিলোমিটার সড়কে হার্ডশোল্ডারসহ পেভমেন্ট (পিচ ঢালাই) করা হবে। এতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৩০ কোটি টাকা। ৫১ কিলোমিটার সড়কের বিদ্যমান পিচ ঢালাই মজবুত করা হবে। আর প্রায় ৬৩ কিলোমিটার সড়কে নতুন পিচ ঢালাই করা হবে। চার লেনের প্রায় সাড়ে ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং দুই লেনের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কে রিজিড পেভমেন্ট (শক্ত পিচ ঢালাই) করা হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫১ দশমিক ৪১ কিলোমিটার সড়ক পুনর্র্নিমাণ ও মেরামত হবে। ৮০৩ মিটার দৈর্ঘ্যের ছয়টি সেতু এবং ১৪৫ মিটারের ১৮টি কালভার্ট নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে প্রকল্পে। সেতু নির্মাণে ২৪০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

এ ছাড়া ১০টি ইন্টারসেকশনের উন্নয়ন এবং ৩০টি বাস-বে নির্মাণে সাড়ে ২১ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব করেছে সওজ। তবে এসব নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। মুদ্রণ, বিজ্ঞাপন, স্টেশনারি খরচ কমিয়ে ডিপিপি তৈরি করতেও বলা হয়েছে। ইউটিলিটি লাইন স্থানান্তরে প্রায় ৬৮ কোটি টাকা খরচের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানের ইউটিলিটি লাইন রয়েছে, সেগুলোর চাহিদাপত্র নিয়ে ব্যয় নির্ধারণ করতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

সড়ক রক্ষায় জিও ব্যাগ এবং ৫২১টি সিসি ব্লকের জন্য ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সড়ক বাঁধের পাশে ৮৮ কিলোমিটার ইটের টো-ওয়াল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কিন্তু এসব কাজের যৌক্তিকতা ও ব্যয় নিয়ে পিইসি সভায় আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।