• মার্চ ২৯, ২০২৪
  • মৌলভীবাজার
  • 16
বাড়ির গাছের নামে করাতকলে উজাড় হচ্ছে বনের গাছ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ প্রাকৃতিক বনের পরিবেশ করাতকলের কারণে বিনষ্ট হতে চলেছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চল, চা বাগান আর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান খ্যাত কমলগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে তিনটি বন বিটসহ রাজকান্দি বন রেঞ্জ।

উপজেলার ৩৪ স মিলে (করাতকল) অবাধে চেরাই করা হচ্ছে টিলা ও চা বাগানের গাছপালা। এতে সাবাড় হচ্ছে চা বাগান, টিলা ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মূল্যবান গাছগাছালি।

বিনষ্ট হচ্ছে স্থানীয় পরিবেশ।

সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জ উপজেলায় ২২টি চা বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, রাজকান্দি বন রেঞ্জের অধীন কামারছড়া, আদমপুর ও কুরমা বন বিট রয়েছে।

আদমপুর ও কুরমা বন বিটে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ছাড়াও রয়েছে বিশাল বাঁশমহাল। রাজকান্দি বন, লাউয়াছড়া বন, কালাছড়া বন থেকে প্রতি রাতেই গাছ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

চা বাগানের টিলাভূমি থেকেও হরদম বড় গাছ চুরির ঘটনা ঘটছে। এসব গাছের বড় অংশই স্থানীয় করাতকলগুলোতে নিয়ে চিরানো করা হচ্ছে। এসব করাতকলে বাড়ির গাছ দেখিয়ে অবাধে চা বাগান ও বনের গাছ চিরানো হলেও নির্বিকার বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৩৪টি করাতকলের মধ্যে ১৭টি করাতকলই অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো করাতকলের মালিক কৌশল হিসেবে উচ্চ আদালতে রিট করে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার প্রায় প্রতিটি করাতকলেই গাছ চিরাইয়ের ধুম লেগেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিটি করাতকলের চারপাশেই সারি সারি গাছের স্তূপ। আকাশি, মেনজিয়াম, কড়ই, সেগুন, গর্জন, গামার, চিকরাশিসহ বনের বিভিন্ন প্রজাতির গাছের গুঁড়ির (খণ্ডাংশ) বিশাল স্তূপ জমেছে। ট্রলি, পিকআপ ও ট্রাক্টরে আনা হচ্ছে কাটা গাছের গুঁড়ি। পর্যায়ক্রমে গাছের গুঁড়ি চিরানো হচ্ছে। বনাঞ্চল, চা বাগান কিংবা বাড়ির গাছ যাচাই-বাছাইয়েরও কোনো ব্যবস্থা নেই। করাতকলগুলোতে নিয়ে আসা গাছের খণ্ডাশের মালিকানা-সংবলিত রেজিস্টার ব্যবহার করার কথা থাকলেও তা নেই। তবে করাতকল মালিক ও স্টাফদের দাবি, করাতকলে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘরের গাছগাছালিই বেশি আসছে। সেগুলোই চিরানো হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন করাতকল ব্যবসায়ী জানান, সংশ্লিষ্ট বন বিভাগ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করেই করাতকল পরিচালনা করছেন তিনি। যে কারণে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, রাজকান্দি বন রেঞ্জ অফিসে প্রতি করাতকল মালিক মাসে কমপক্ষে এক হাজার টাকা দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দিবসে তিন থেকে চার হাজার টাকা হারে চাঁদা দিতে হয়। ফলে করাতকলে গাছ নিয়ে আসা ব্যবসায়ীদের সমস্যা হচ্ছে না। তবে যারা চিরানোর জন্য নিয়ে আসেন, সবাই বাড়ির গাছ বলে চিরিয়ে নিচ্ছেন।

স্থানীয় পরিবেশকর্মী আব্দুল আহাদ বলেন, যে হারে বন ও চা বাগানের গাছ চিরানো হচ্ছে, তাতে প্রাকৃতিক বন ও চায়ের টিলাভূমি ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। বনাঞ্চল, চা বাগান ও গ্রামের গাছগাছালি উজাড় হওয়ার ফলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এতে একদিকে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল বিলুপ্ত হচ্ছে। আবার চা বাগানে ছায়াবৃক্ষের অভাবে উৎপাদনও হ্রাস পাচ্ছে।

রাজকান্দি বন রেঞ্জ কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানান, করাতকলে বন বিভাগের গাছ চিরানোর বিষয়ে তাদের নজরদারি আছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘরের গাছগাছালিই চিরানো হচ্ছে। বনের কিংবা চা বাগানের গাছের খবর পেলেই বন বিভাগের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কয়েকটি অবৈধ করাতকলের মালিক আদালতে মামলা দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে অবৈধ করাতকলগুলো বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।