• আগস্ট ১৬, ২০২০
  • শীর্ষ খবর
  • 376
ইমজার মানবিক কর্মসূচির শততম দিন আজ

নিউজ ডেস্কঃ শনিবার রাতে ক্বীনব্রিজ এলাকায় ছিল না কোনো আলো। সিটি কর্পোরেশন আর বিদ্যুৎ বিভাগে যোগাযোগ করেও কোনো কাজ হলো না। গত তিনদিন ধরেই নাকি এখানে বিদ্যুৎ থাকে না। চাঁদনীঘাটের ওয়াকওয়ের যে স্থানে ইমজা ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করে সেখানে রাখা নগর এক্সপ্রেসের বাসের সারি। অনেক অনুরোধের পর তারা ঘন্টাখানের জন্য কিছুটা জায়গা ছেড়ে দিতে রাজি হলেন। জানালেন সিটি কর্পোরেশনের অনুমতি নিয়েই তারা ওয়াকওয়েতে গাড়ি রাখেন।

এতো প্রতিকূলতাতেও থেমে থাকেনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহদাৎবার্ষিকী ও করোনাকালে ইমজার মানবিক কর্মসূচির প্রথমপর্বের সমাপনি অনুষ্ঠান।

ক্যামেরার ফ্লাসলাইট আর মোটরসাইকেলের হেডলাইট জ্বালানো আলোতে সহমর্মিতা ঢেলে দিলেন সিলেট জেলার দুই প্রধান কর্তা সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন। খাবারের প্রত্যাশায় সমবেত ছিন্নমূল মানুষ আর পথশিশুদের হাতে খাবার তুলে দিয়ে তাদের স্বাবলম্বি হবার, সুপথে ফেরার পরামর্শ দিতে পেরে ধন্যবাদ জানালেন ইমজাকেও।

করোনাকালে সহমর্মিতায় ভালোবাসায় মানুষের পাশে ইমজা, এই কর্মসূচির আওতায় যখন সিলেটের সকল হোটেল রেস্তোরা বন্ধ তখন থেকেই তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে সিলেটের টেলিভিশন সাংবাদিকদের সংগঠন ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েসন (ইমজা) সিলেট নগরীর ক্বীনব্রিজ এলাকায় ভবঘুরে ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে খাবার এবং করোনা থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্য উপকরণ ও উপদেশ দিয়ে আসছে। একই সাথে ইমজা চেষ্টা করছে যারা ছোটোখাটো অপরাধে জড়িত বা নেশাগ্রস্ত তাদের সুস্থ জীবনে ফেরার তৃষ্ণা জাগিয়ে তুলতে মানসিকতায় পরিবর্তন আনার।

ইমজার এই মানবিক কর্মসূচির নিরানব্বইতম দিন ছিল শনিবার। রবিবার একশতম দিনে কর্মসূচির প্রথমপর্বের সমাপ্তির কথা থাকলেও মুজিববর্ষে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে শনিবার জাতীয় শোক দিবসেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংক্ষিপ্ত সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ইমজার আমন্ত্রণে সেখানে উপস্থিত হন সিলেটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার।

মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে এরই মধ্যে সুনাম অর্জনকারী পুলিশ সুপার মো. ফরিদ্দ উদ্দিন বেশ কিছুদিন ধরেই ইমজার মানবিক কর্মসূচিকে সাহচর্য দিয়ে আসছেন। নিজের বক্তব্যে তিনি উদ্যোক্তাদের সাথে সাথে স্বেচ্ছাসেবকদের বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বন্যা ও করোনার চরম সময়ে তৃণমূলে কাজ করে দেখেছি মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ালে অনেক অসাধ্য সাধন করা যায়। এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসলেও সংকটের একেবারে শুরু থেকে দীর্ঘ সময় ধরে ইমজা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আন্তরিকতার প্রমাণ রেখেছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে নিবেদিন প্রাণ স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য। জাতির জনকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে এই দেশকে সমতা ও শান্তির দেশ হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের দায়িত্ব।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, ইমজা যা করেছে সেটি অনুকরণীয়। জাতির জনকের স্বপ্ন ও ত্যাগ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে আমাদের মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। কারো জন্য কারো অপেক্ষা করে থাকলে হবে না , সবাই মিলে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, সাংবাদিকরা সাধারণত সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশন করে থাকেন কিন্তু সিলেটের টেলিভিশন সাংবাদিক তথা ইমজার সদস্যরা নিজের পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি সমাজের প্রতি যে দায়বদ্ধতা দেখিয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। প্রবাসের এবং দেশের যেসকল হৃদয়বান মানুষে এই কর্মসূচিতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি তাদেরও ধন্যবাদ জানান।

ইমজা নেতৃবৃন্দ মানবিক কর্মসূচির পরবর্তী পর্ব সম্পর্কে জেলা প্রশাসককে অবিহিত করলে তিনি এ ধরনের সকল কার্যক্রমে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

ইমজা নেতৃবৃন্দ জানান, তিন মাসেরও বেশি সময় খাবার বিতরণের পাশাপাশি অনেক ভাসমান মানুষকে তাদের বাড়িতে পৌছে দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি পথশিশু খুঁজে পেয়েছে আশ্রয়। রবিবার (আজ) একশতম দিনের মতো ক্বীনব্রিজ এলাকায় খাবার বিতরণের পর বাছাই করা পথশিশুদের পৃথক করে তাদের বিশেষ পরিচর্যা করা হবে। তিন সপ্তাহের বিশেষ উদ্যোগে মানসিকতায় স্বাভাবিকতা এনে তাদের সমাজসেবা কিংবা অন্যান্য সরকারি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেওয়া হবে। সেখানে তারা একটি সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে বলে প্রত্যাশা উদ্যোক্তাদের। এ জন্য তারা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থাও এক্ষেত্রে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে সংক্ষিপ্ত সভা শেষে দেড় শতাধিক মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়।

ইমজার সাধারণ সম্পাদক সজল ছত্রীর সঞ্চালনায় এবং সভাপতি মাহবুবুর রহমান রিপনের সভাপতিত্বে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রাখেন সাবেক সভাপতি বাপ্পা ঘোষ চৌধুরী, আশরাফুল কবীর, সিনিয়র সহ সভাপতি মঈন উদ্দিন মনজু, সহ সভাপতি আনিস রহমান, সহ সম্পাদক প্রত্যুষ তালুকদার, কোষাধ্যক্ষ গোপাল বর্ধন, পাঠাগার সম্পাদক শাকিল আহমদ সোহাগ, নির্বাহি সদস্য শফি আহমদ, সংস্কৃতিকর্মী ও স্বেচ্ছাসবী জাহাঙ্গীর আহমদ, তমিশ্রা তিথি, অলক চৌধুরী, বাপন তালুকদার, গোপ নন্দলাল, মুরাদ বক্স, মেকদাদ মেঘ প্রমুখ।