• নভেম্বর ১৮, ২০২১
  • শীর্ষ খবর
  • 266
বৈষম্যের বাধা পেরিয়ে সামছুন্নাহার এখন অনুপ্রেরণার নাম

হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ নারীর প্রতি পুরুষ সহকর্মীদের বৈষম্যমূলক আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি যেমন উদ্বেগের কারণ, তেমনি নারীদের অনেকেই এখন সমাজে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন শ্রম, ঘাম আর মেধা দিয়ে। তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন এ প্রজন্মের অসংখ্য নারী।

এ অনন্য নারীদের একজন মোছা. সামছুন্নাহার বেগম। যিনি নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ‘মনোবল অটুট রেখে’ কাজ করছেন পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য ও তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে। সামছুন্নাহার হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রাজিউড়া ইউনিয়নের চারিনাও গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক, দুই ও তিন নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের তিন বারের নির্বাচিত সদস্য। এবারের নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, সামছুন্নাহার বেগম সকালে উঠেই বেড়িয়ে পড়েন জনসেবামূলক কাজে। ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালনের ফাঁকে ছুটে যান পিছিয়ে থাকা নারীদের বাড়ি বাড়ি। কোনো নারী অসুস্থ হলে তার সঙ্গে চলে যান হাসপাতাল পর্যন্ত। শিক্ষিত তরুণীদের সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের দিকে উদ্বুদ্ধ করেন। পুরো ইউনিয়ন জুড়েই তার পদচারণা। অসহায় নারী বিপদে পড়লেই সামছুন্নাহারকে স্মরণ করেন এবং তিনি ছুটে যান।

রাজিউড়া এলাকার গৃহিনী আয়েশা খাতুন বলেন, সামছুন্নাহার প্রথমবার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার পর অনেকেই তার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও মনোবল অটুট রেখে কাজ করেছেন তিনি। গত ১৮ বছরে হাজারো নারীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। কর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ করেছেন অসংখ্য তরুণীকে। তার পরামর্শে বেসরকারিভাবে সেলাই মেশিনসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন অসংখ্য তরুণী। ওই তারুণীরা এখন হবিগঞ্জের শিল্প এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।

রাজিউড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমদ বলেন, সকাল অথবা রাত, যে কোনো সময় এলাকার অসহায় নারীদের বিপদে সামছুন্নাহার ঝাঁপিয়ে পড়েন। স্বামীর নির্যাতনের শিকার বেশ কয়েকজন নারীর পাশে থেকেছেন। তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করেছেন। তিনি বর্তমান সমাজে নারীদের অহংকার।

ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামছুন্নাহার ২০০৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্যের পদে দায়িত্ব পালন করছেন। যুক্ত আছেন নারীদের সংগঠন ‘নারী উন্নয়ন ফোরাম’ এর সঙ্গে। ব্যক্তিগত জীবনে বিয়ে করেননি। তার সংসার এখন ভাই, ভাবী ও তাদের দু’টি সন্তান নিয়ে। এ দুই শিশুকে তিনি নিজের সন্তানের মতই লালন-পালন করছেন।

ইউনিয়ন পরিষদের সাত, আট ও নয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শম্পা আক্তার মেঘলা বলেন, ইউনিয়নটি প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় আত্মকর্মসংস্থানের দিকে এখানকার নারীরা অনেক পিছিয়ে ছিলেন। সামছুন্নাহারের মাধ্যমে হাজারো নারী কাজে যোগ দিয়েছেন। তারা সামাজিক প্রতিকূলতাকে জয় করতে শিখেছেন। প্রতিটি এলাকায় এমন নারী জনপ্রতিনিধি থাকলে নারীদের পিছিয়ে থাকতে হতো না।

সামছুন্নাহার বেগম বলেন, আমি চতুর্থ শ্রেণি থেকেই সহপাঠীদের সমস্যায় তাদের পাশে থাকতাম। তখন পাঠ্যবইয়ে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি গদ্য পড়তাম ও বার বার তার ছবিটি দেখতাম।

তিনি আরও বলেন, প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর থেকে যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে কাজ করেছি। এখন ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। জনপ্রতিনিধিত্ব করার বয়স ১৮ বছর। দুইবার নির্বাচন করলেও এবার আমার প্রতি সম্মান দেখিয়ে কেউ আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হননি। মানুষের বিশ্বাস আর আস্থাকে ধরে রাখতে চাই।

সামছুন্নাহার বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতার একটি ঘটনা প্রত্যক্ষ করার পর বিয়ের প্রতি আমার অনিহা সৃষ্টি হয়। এজন্য বিয়ে করিনি। জনপ্রতিনিধিত্বের শুরুর দিকে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে। এখন সবাই আমাকে সম্মান ও স্নেহ করেন। এতদিন পর নারী-পুরুষ বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি।